কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী। ছবি: রণজিৎ নন্দী
আদতে ছিল কৃতী ছাত্রছাত্রীদের পদক প্রদানের অনুষ্ঠান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার সেই মঞ্চকেই বাছলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারকে পাশে বসিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানালেন, ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন বা নাক-এর পরিদর্শনে বিশ্ববিদ্যালয় যে-গ্রেড পেয়েছে, তিনি তাতে মোটেই খুশি নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতি এবং সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘‘সরকার কিছু বললেই অমনি বলা হবে, স্বাধিকার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! মানুষের অধিকার বড়, নাকি স্বাধিকার বড়? এত যে আর্থিক অনিয়ম হচ্ছে, তার কী হবে? এগুলো বরদাস্ত করা হবে না।’’
এই প্রসঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয়ে সরকারি নজরদারির কথা তোলেন পার্থবাবু। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের করের টাকায়। তাই আর্থিক বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না, এটা হতে পারে না। মঞ্চে উপস্থিত উপাচার্য, সহ-উপাচার্যদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এক ধরনের লোক অন্যায় করবে। আপনারা ধামাচাপা দিয়ে বলবেন, স্বাধিকার নষ্ট হচ্ছে। তা হবে না।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা তছরুপের বিষয়ে সম্প্রতি বিধানসভায় সরব হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সেখানে বলেননি। এ দিন কলকাতা ও যাদবপুরের নাম উল্লেখ করে তিনি জানান, এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির কোনও হিসেব নেই। সব অন্যদের হাতে চলে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সেই সম্পত্তি রক্ষা করতে পারেনি।
নাক-এর পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে-ফল করেছে, তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পার্থবাবু। তিনি বলেন, ‘‘যদি দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্যকে সামনে রেখে নাক-এর পরিদর্শনে আরও ভাল ফল করেছে, খুশি হতাম।’’
কয়েক মাস আগেই নাক-এর প্রতিনিধিরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে বহু শিক্ষক-পদ কেন ফাঁকা এবং উপাচার্য, রেজিস্ট্রারের পদে অস্থায়ী নিয়োগ কেন, সেই সব প্রশ্ন তুলেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন শিক্ষক-পদ অবিলম্বে পূরণের উপরে জোর দেন। তিনি জানান, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। ‘‘যখন প্রথম শ্রেণি পেয়েও কোনও পড়ুয়া অন্য কোথাও সুযোগ পান না, তখন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সে-ক্ষেত্রে সরকারের দায় থেকেই যায়,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলির উপরে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো দরকার বলেও মন্তব্য করেন পার্থবাবু। তিনি মনে করেন, ওই সব কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম হয়। তাঁর অভিযোগ, আসন যেখানে মাত্র দু’হাজার, সেখানে চার হাজার পড়ুয়া ভর্তি করা হচ্ছে। এ-সব শুধু কলেজসমূহের পরিদর্শকের একার দেখার কথা নয়। সম্মিলিত ভাবে এগুলো দেখতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা থেকে ছাত্রছাত্রীরাও বাদ যাননি। পড়ুয়াদের আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকলকে সম্মান দিতে হবে। ওঁরা যখন-তখন ঘরে ঢুকে পড়ছেন। এমন ব্যবহার করছেন, যার জেরে ছাত্রসমাজ সম্পর্কে জনমানসে বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে।’’
গত মাসেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী জয়া দত্ত বহিরাগতদের নিয়ে উপাচার্যের ঘরে ঢোকায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। বিষয়টি গড়িয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত। এ দিন পদক প্রাপকদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল বেশি। এতে সন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যগঠিত ছাত্র সংসদে ছাত্রীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা তোলেন মন্ত্রী।
সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ মেনে নিয়ে সহ-উপাচার্য (অর্থ) সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘স্থাবর সম্পত্তির তালিকা তৈরি হচ্ছে। বহু সম্পত্তি জবরদখল হয়ে আছে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী যে-অভিযোগ করেছেন, এ দিন সেই বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি সেখানকার উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।