ভগ্ন: অনাদরে পড়ে অল্ডিন সাহেবের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
এক নয়া ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে শ্রীরামপুর কলেজ! ১৮১৮ সালে যে ইতিহাস পথ চলা শুরু করেছিল, দিন গুনতে গুনতে তা দ্বিশতবর্ষের দোড়গোড়ায় হাজির। বিশেষ বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে টানা এক বছর উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। তাতে শহরবাসীকে সামিল করতে শুক্রবার সন্ধ্যায় নাগরিক অধিবেশন হয়ে গেল কলেজ এবং শ্রীরামপুর পুরসভার উদ্যোগে।
শহরের টাউন হলে আয়োজিত ওই অধিবেশনে কলেজের অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাংগ্লুরা জানালেন, আগামী ২০ নভেম্বর উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অধ্যক্ষ ছাড়াও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়, কলেজের প্রাক্তনী সংসদের সভাপতি তথা প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অনুপকুমার সেনগুপ্ত, চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি কামনাশিস সেন প্রমুখ। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি কলেজ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি নানা পরিকল্পনা নেওয়ারও দাবি ওঠে।
১৮১৮ সালে শহরের জলকল এলাকায় জনৈক রেভারেন্ড অল্ডিন সাহেবের বাড়িতে ৩৭ জন পড়ুয়াকে নিয়ে পথ চলা শুরু শ্রীরামপুর কলেজের। ১৮২২ সালে বর্তমান ভবনে কলেজ স্থানান্তরিত হয়। শহরবাসীর আক্ষেপ, কলেজের সেই ‘আঁতুড়ঘর’ অল্ডিন হাউজ আজ ধ্বংসস্তূপ। ঝোপজঙ্গল এবং সাপের আস্তানায় পরিণত সেই ইতিহাস দ্বিশতবর্ষের আলো থেকে অনেকটাই দূরে। পুরনো ভবনের সংস্কারের দাবি ওঠে সভায়। একই ভাবে কলেজের তিন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে উইলিয়াম কেরির কথা প্রচারিত হলেও জ্যোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড আজও কার্যত আড়ালে! উঠেছে তাঁদের প্রতিকৃতি স্থাপনের দাবিও।
শহরের নাগরিক এবং শিক্ষাব্রতীদের দাবি, বিভিন্ন বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রম পুরোদস্তুর ভাবে শুরু হোক এখানে। শুধু ধর্মতত্ত্ব নয়, সামগ্রিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হোক এই মহাবিদ্যালয়। এই প্রসঙ্গে কলেজের দখল হয়ে যাওয়া কিছু সম্পত্তি পুনরুদ্ধার এবং ক্যাম্পাসের পরিসর বাড়াতে সরকারের কাছে জমির জন্য আবেদনের প্রস্তাবও ওঠে।
হরফ শিল্পে এই শহর থেকেই কার্যত বিপ্লব হয়েছিল। পঞ্চানন কর্মকার এবং তাঁর উত্তরসূরিরা শ্রীরামপুরে বসে হরফশিল্পকে এক অন্য খাতে বইয়ে দিয়েছিলেন। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছিল। কলেজের দ্বিশতবর্ষে ফের এখান থেকে প্রকাশনার ব্যবস্থা করা নিয়ে আলোচনা হয় সভায়। কেরি লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টারে আঞ্চলিক ইতিহাসের বহু আকর গ্রন্থ রয়েছে। গবেষকদের জন্য এখানে আরও ভাল পরিষেবার দাবিও ওঠে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, সব প্রস্তাবই বিবেচনা করা হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানকে ‘গ্রিন কলেজ’ তৈরির জন্য নানা পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। সেইমতো কাজও শুরু হয়েছে।