সেই কাউন্সিলরের নামে আরও নালিশ

পুর চেয়ারম্যান ও পুলিশের কাছে কামারহাটির এক মহিলা তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন দলেরই এক কর্মী। এর পরে ওই কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে ওই কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

এ ভাবেই আটকে গিয়েছে যদুনাথবাবুর বাড়ির মূল গেট। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

পুর চেয়ারম্যান ও পুলিশের কাছে কামারহাটির এক মহিলা তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন দলেরই এক কর্মী। এর পরে ওই কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে ওই কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশি তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই ‘বেপাত্তা’ অভিযুক্তেরা। তবে এর পর থেকেই কামারহাটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলর অজিতা ঘোষের (দত্ত) বিরুদ্ধে কখনও প্রোমোটারির জন্য চিকিৎসকের চেম্বার দখল, কখনও বা কাউকে বাতিস্তম্ভে বেঁধে মারধরের মতো একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।

Advertisement

কামারহাটির তৃণমূল নেতাদের একাংশের কথায়, ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পুলিশ ও দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে আগে কয়েক জন অভিযোগ জানালেও এতদিন প্রকাশ্যে বলতে সাহস পাচ্ছিলেন না সাধারণ মানুষ। দলের এক কর্মী সরব হওয়ায় এ বার সাহস পাচ্ছেন অন্যেরাও।

এ নিয়ে মঙ্গলবার তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি দেখেছি। বিস্তারিত জানি না। কেন ওই কাউন্সিলর বেপাত্তা, তা প্রশাসন নিশ্চয় দেখছে। আর কোনও অনৈতিক কাজকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই নেই। প্রশাসন ওঁকে ধরুক, দোষ প্রমাণিত হলে দলও কড়া ব্যবস্থাই নেবে।’’ অন্য দিকে ব্যারাকপুরের পুলিশ কর্তাদের দাবি, খোঁজ চলছে। কিন্তু আপাতত অজিতাদেবী এবং তাঁর স্বামী তাপস দত্তের খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

অজিতাদেবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে এমনিতেই অস্বস্তিতে ছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এর সঙ্গে সোমবার আলিপুর আদালতের বাইরে কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক মদন মিত্রের ওই এলাকায় ‘তোলাবাজি’ প্রসঙ্গে মন্তব্য অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। মদন জানিয়েছেন, তিনি আর কামারহাটির বিধায়ক নন ঠিকই। কিন্তু তাঁর কাছে খবর রয়েছে, এক সময়ে তাঁর খাসতালুক কামারহাটিতে তোলাবাজির সমস্যা বেড়েছে। যার সঙ্গে দলেরই কয়েকজন নেতা, কাউন্সিলর জড়িত বলে শোনা যাচ্ছে।

গত ১৮ জুলাই অজিতাদেবী ও তাপসবাবুর বিরুদ্ধে বেলঘরিয়া থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন এক সময়ে কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দলীয় কর্মী শিবু নাগ। কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পুর চেয়ারম্যান ও পুলিশ কাছে তোলাবাজির অভিযোগ করেছিলেন বলেই তাঁর উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ শিবুর। তার পরে আট দিন ধরে অজিতাদেবী ও তাপসবাবুর খোঁজ নেই বলেই স্থানীয় সূত্রে খবর। এ দিকে, শিবুর পাশাপাশি স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা ও তৃণমূল কর্মীরাও এ বার বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলেছেন অজিতাদেবীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার বেলঘরিয়ার ঠাকুরদাস ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা তথা কলকাতা পুরসভার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রদীপ রায়চৌধুরী জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে কাউন্সিলরের বাড়ির কাছেই একটি তিনতলা বাড়ির একতলায় চেম্বার ছিল তাঁর। অভিযোগ, মে মাসে আচমকাই কাউন্সিলরের নাম করে কয়েকজন এসে ওই বাড়ি ছাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘রাজি না হওয়ায় চেম্বারে ভাঙচুরও করে তারা।’’ পুলিশে অভিযোগ জানানোয় তাপসবাবু তাঁকে হুমকি দেন বলে দাবি প্রদীপবাবুর। আরও অভিযোগ, অজিতাদেবীর নির্দেশে ওই জমিতে প্রোমোটারির জন্য এক সময়ে গোটা বাড়িটিই ভেঙে দেওয়া হয়। বুধবার বেলঘিরায় থানার পুলিশ ওই অভিযোগে প্রোমোটার নয়ন মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। শিয়ালদহ আদালতও ওই জমির উপর নির্মাণ কাজে স্থগিতাদেশ জারি করেছে।

অন্য দিকে, বেলঘরিয়া নন্দননগর বাজারের বাসিন্দা যদুনাথ মল্লিক অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ির দখল নিয়ে প্রোমোটারির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন অজিতাদেবীরা। রাজি না হওয়ায় শুরু হয় অত্যাচার। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির মূল গেট বন্ধ করে দিয়েছে, নীচে আমার দোকানের সামনে রাস্তায় অস্থায়ী দোকান বসিয়েছে।’’ পুলিশে অভিযোগ করার অপরাধে দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন সকালে বাড়ির সামনে বাতিস্তম্ভে বেঁধে যদুনাথবাবুকে দেড় ঘণ্টা মারধর করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। সেই মামলা এখনও চলছে।

স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সুমন বসু বলেন, ‘‘কখনও স্কুলবাড়ি দখল, কখনও জমি দখলের মতো অনৈতিক কাজে মদত দিয়েছেন কাউন্সিলর। প্রতিবাদ করলেই হুমকি দিতেন। কামারহাটির পুর চেয়ারম্যান তথা বেলঘরিয়া টাউনের সভাপতি গোপাল সাহা বলেন, ‘‘ওই কাউন্সিলরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই করা যাচ্ছে না। তাই কথাও বলতে পারছি না। তবে পুলিশ ধরার পরে যদি দোষ প্রমাণিত হয় তখন রাজ্য নেতৃত্ব নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন