প্রথম না পঞ্চম, কোন শ্রেণিতে ফিরছে পরীক্ষা

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবে অন্য কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ আগেই নীতিগত সম্মতি দিয়েছিল। রাজ্য সরকার এ বার জানিয়ে দিল, স্কুল স্তরে পাশ-ফেল ফেরানো হচ্ছেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবে অন্য কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ আগেই নীতিগত সম্মতি দিয়েছিল। রাজ্য সরকার এ বার জানিয়ে দিল, স্কুল স্তরে পাশ-ফেল ফেরানো হচ্ছেই। কোন ক্লাস থেকে কী ভাবে এই প্রথা ফিরবে, মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই তা ঠিক করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার বিধানসভায় জানান।

Advertisement

কোন ক্লাস থেকে পাশ-ফেল প্রথা ফিরছে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলেননি। তবে তাঁর এ দিনের বক্তব্যেই স্পষ্ট, এই ব্যাপারে শেষ কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রীই। শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, পঞ্চম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল ফেরার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু পাশ-ফেল ফেরানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে যারা আন্দোলন করছে, সেই এসইউসি-র দাবি, ওই প্রথা ফেরাতে হবে প্রথম শ্রেণি থেকেই।

কবে ওই প্রথা ফিরবে, সেই বিষয়ে এ দিন নিশ্চিত ভাবে কিছু জানা যায়নি। শিক্ষা শিবিরের কোনও কোনও অংশের মতে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই পাশ-ফেল ফিরতে পারে। তবে সরকারি ভাবে এর কোনও সমর্থন মেলেনি। তবে নবান্ন সূত্রের খবর, এই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেই।

Advertisement

২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল নেই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত আছে। ২০১৫ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি সরকার। সেই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, স্কুল স্তরে পাশ-ফেল প্রথা ফেরানো। শিক্ষার বিষয়টি কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকার অন্তর্ভুক্ত বলে এই ব্যাপারে সব রাজ্যের মত জানতে চায় দিল্লি। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্তত ২৫টি রাজ্য স্কুলে পাশ-ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনার পক্ষেই নীতিগত সম্মতি জানিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রত্যাবর্তন এখনও সম্ভব হয়নি।

জুলাইয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর কলকাতায় এসে জানান, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেখানে যারা ফেল করবে, তাদের আবার এক বার পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে দু’মাস পরে। তাতেও পাশ করতে না-পারলে পড়ুয়াকে রেখে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট ক্লাসেই। এই প্রথা ফেরানোর জন্য আইন সংশোধনের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, এই প্রথা ফিরলে স্কুলছুটের হার যাতে না-বাড়ে, সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দিল্লি সূত্রে শুক্রবার জানা যায়, আইন সংশোধনের জন্য বিল আসতে পারে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে।

রাজ্য সরকার যে শেষ পর্যন্ত স্কুল স্তরে পাশ-ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিল, সেটাকে রাজ্যবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের জয় বলে মনে করছে এসইউসি। বস্তুত, বাম জমানায় প্রাথমিক স্তর থেকে পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়ার পর থেকে তা ফেরানোর দাবিতে গণ আন্দোলন গড়ে তোলে এসইউসি-ই। তাদের বক্তব্য, পাশ-ফেল ব্যবস্থা না-থাকায় রাজ্যের গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। এ দিন পার্থবাবুর সিদ্ধান্ত জানার পরে এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু বলেন, ‘‘সরকারকে প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন