মাছভাতের রাজধানী জয়

ফিশফ্রাই হোক না-হোক, পরোয়া নেই। আপাতত রাজধানীতেও বাঙালির ভাতের পাতে মাছ! বাংলা থেকে ছাড়া দু’টি রাজধানী এক্সপ্রেসে বৃহস্পতিবার থেকেই চালু হয়ে গেল বাঙালির এই চিরন্তন পদ। এ রাজ্য থেকে রাজধানীর যাত্রা শুরুর ৪৭ বছরে এই প্রথম! শুধু মাছভাতের অভিষেক নয়, সপ্তাহের সাত দিনই স্বাদ বদলের অর্থাৎ মেনুকার্ড বদলের ব্যবস্থাও হচ্ছে রাজধানী এক্সপ্রেসে! রেলকর্তাদের আশ্বাস, রাজধানীর তুতোভাই শতাব্দী-দুরন্ত এক্সপ্রেসের মেনুতেও পরিবর্তন আসন্ন!

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৪৭
Share:

পরিদর্শনে আর কে গুপ্ত। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

ফিশফ্রাই হোক না-হোক, পরোয়া নেই। আপাতত রাজধানীতেও বাঙালির ভাতের পাতে মাছ!

Advertisement

বাংলা থেকে ছাড়া দু’টি রাজধানী এক্সপ্রেসে বৃহস্পতিবার থেকেই চালু হয়ে গেল বাঙালির এই চিরন্তন পদ। এ রাজ্য থেকে রাজধানীর যাত্রা শুরুর ৪৭ বছরে এই প্রথম! শুধু মাছভাতের অভিষেক নয়, সপ্তাহের সাত দিনই স্বাদ বদলের অর্থাৎ মেনুকার্ড বদলের ব্যবস্থাও হচ্ছে রাজধানী এক্সপ্রেসে! রেলকর্তাদের আশ্বাস, রাজধানীর তুতোভাই শতাব্দী-দুরন্ত এক্সপ্রেসের মেনুতেও পরিবর্তন আসন্ন!

পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু ১৯৬৯ সালে। হাওড়া থেকে ছাড়া সেই ট্রেনে এত দিন মাছভাতের বন্দোবস্ত ছিল না। তবে জন্মলগ্ন থেকেই সেই রাজধানীর সঙ্গে জুড়ে ছিল ফিশফ্রাই। বিকেলে ট্রেনে উঠে গরম চা কিংবা কফির সঙ্গে গরম ফিশফ্রাইয়ে কামড় বসানোয় ছিল আলাদা মজা ও মেজাজ। কিন্তু ২০০৫ সালে হঠাৎই ওই পদ তুলে দেওয়া হয়। পরে যাত্রীদের চাহিদা ও রেলকর্তাদের একাংশের ইচ্ছেয় রাজধানীতে ফিরে আসে ফিশফ্রাই। কিন্তু রেলের কর্তারাই বলছেন, তার সেই স্বাদকৌলীন্য ছিল না। পরে ফের তুলে নেওয়া হয় ফিশফ্রাই। রেলকর্তাদের যুক্তি ছিল, মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচে পোষাচ্ছিল না।

Advertisement

ফিশফ্রাইয়ের ছোঁয়ায় মাছের স্বাদটুকু পেতেন বাঙালি যাত্রীরা। কিন্তু ফিশফ্রাইয়ের বিদায়ে সেই মাছের ছোঁয়াও উঠে গিয়েছিল রাজধানী থেকে। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে সফরকারীদের অনেকেই বলছেন, চিজ-গাজরে ভরা স্যান্ডউইচ কিংবা মোটা খোসার শিঙাড়া অনেকেই খেতেন না। কখনও কখনও সেই খাবার খেয়ে বিপত্তিও ঘটেছে। কেউ কেউ আবার অপছন্দের খাবার দেখেই ‘খারাপ খাবার’ বলে অভিযোগ করতেন বলে রেল সূত্রের দাবি।

হঠাৎ স্বাদবদল কী ভাবে?

দেশ জুড়ে রেল উপভোক্তা পক্ষ পালন করছে রেল বোর্ড। মন্ত্রী-সান্ত্রি থেকে রেলের শীর্ষ অফিসারেরা পালা করে নেমে পড়ছেন স্টেশনে স্টেশনে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে চাইছেন, অসুবিধা কোথায়। বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শনে শিয়ালদহ থেকে রাজধানীতে চাপেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত। দুর্গাপুরে নেমে হাওড়ায় ফেরেন রাঁচি-শতাব্দী এক্সপ্রেসে।

খাবারটা যে রাজধানী এক্সপ্রেসের অন্যতম মূল সমস্যা, আগে থেকেই জানতেন গুপ্ত। তাই ট্রেন ছাড়ার আগেই তিনি সটান উঠে যান প্যান্ট্রিকারে। ফ্রিজ থেকে তাওয়া, জল থেকে প্যাকেটবন্দি খাবার— সব কিছুই খতিয়ে দেখেন। হঠাৎই ঘুরে দাঁড়িয়ে ডাকলেন এক কর্মীকে। ফ্রিজের গায়ে আঙুল ঘষে দেখিয়ে দিলেন, নোংরা লেগে রয়েছে। এর পরেই সদলবল ঢুকে যান কামরায়।

অভিযোগ নয়, আবদারের সুরেই দাবি জানাতে শুরু করলেন যাত্রীরা। হিমাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক যাত্রী বললেন, ‘‘বাংলার রাজধানী। কিন্তু বাঙালির খাবার কই! নিরামিষ মেনুটা বদলান প্লিজ। পনির খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গিয়েছে।’’ ‘‘এক সপ্তাহের মধ্যেই বদলে যাবে,’’ তৎক্ষণাৎ আশ্বাস জেনারেল ম্যানেজারের।

রাজধানীর প্রথম কেটারিং ম্যানেজার ছিলেন রতনচন্দ্র চন্দ্র। আশি পেরোনো রতনবাবু এখনও রাজধানীর খাবারদাবারের খোঁজখবর রাখেন। ইদানীং নানা অভিযোগ শুনে তিনিও বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন। রেলকে তাঁর পরামর্শ, ‘‘রাজধানীর মান বাঁচাতে ফিশফ্রাই ফিরিয়ে আনা হোক।’’ এই পরামর্শ কানে গিয়েছে রেলকর্তাদেরও। তবে তাঁরা বলছেন, রাজধানীতে মাছের ফিলে বেশি দিন সংরক্ষণ করতে হয়। তাই দেশের তুলনায় অনেক উন্নত পন্থায় সংরক্ষিত বিদেশি ফিলে আমদানি করা হত। তার দাম প্রচুর বেড়ে যাওয়াতেই তুলে দিতে হয়েছে সর্বজনপ্রিয় ফিশফ্রাই। এ দিন জিএমের পরিদর্শনকারী দলের সদস্য শিয়ালদহের ডিআরএম জয়া বর্মা বলেন, ‘‘ফিশফ্রাই খেতে আমরা কি ভালবাসি না!’’ কিছু রেলকর্তারও ইচ্ছে, অন্য পদের সঙ্গে সমঝোতা করে ফিশফ্রাই ফিরিয়ে আনা হোক!

‘‘এত কিছু হল, ফ্রিশফ্রাইটা হবে না,’’ এক যাত্রীর আবদার শুনে এক রেলকর্তার আশ্বাস, ‘‘হবে হবে। ধীরে ধীরে হবে। তার আগে আজই একটা বদল দেখতে পাবেন।’’

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। দুর্গাপুরে ঢুকল ট্রেন। সপার্ষদ নেমে গেলেন জিএম।

এবং ওই স্টেশন থেকেই রাজধানীতে উঠল বাঙালির মাছভাত। বদল কিছুটা তো বটেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন