না ছুটলে দমবন্ধ হয়ে মরতাম

হাসপাতাল জুড়ে লোকে লোকারণ্য। একদিকে বহির্বিভাগের ভিড়। অন্যদিকে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলছে ভিজিটিং আওয়ার্স। শনিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী ও রোগীর বাড়ির আত্মীয়ে গমগম করছে তামাম হাসপাতাল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৩
Share:

হাসপাতাল জুড়ে লোকে লোকারণ্য। একদিকে বহির্বিভাগের ভিড়। অন্যদিকে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলছে ভিজিটিং আওয়ার্স। শনিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী ও রোগীর বাড়ির আত্মীয়ে গমগম করছে তামাম হাসপাতাল।

Advertisement

ঠিক সেই সময়েই চিৎকারটা ভেসে এসেছিল হাসপাতালের দোতলা থেকে—‘আগুন...আগুন...বাঁচাও....।’

সেই চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে দোতলা থেকে তিন তলা, সেখান থেকে গোটা হাসপাতাল। মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় হাসপাতালের চেনা ছবিটা। আতঙ্কে যে যেদিকে পারেন দৌড়তে শুরু করেন। সঙ্কীর্ণ সিঁড়িতে তখন ঠাঁই নেই রব। একে অন্যকে টপকে নীচে নামতে চাইছিলেন। বিপত্তিটা বাধে সখানেই। কেউ হুমড়ি খেয়ে সিঁড়ির উপরে গড়িয়ে পড়েন। তাঁকে মাড়িয়েই চলে যান আরও কয়েক জন। সকলেই তখন প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত।

Advertisement

হাসপাতালের মাইকে তখন সমানে সতর্ক করা হচ্ছে—‘অযথা আতঙ্কিত হবেন না। দমকল এসে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’ কিন্তু সে কথা শোনার মতো অবস্থায় নেই কেউ। এরমধ্যেই মারা গিয়েছেন হাসপাতালের আয়া কাবেরী সরকার (৪০) ও রোগীর বাড়ির এক আত্মীয়, পলাশির বাসিন্দা উজ্জ্বলা হাজরা (৪৫)। জখম হয়েছেন ১৭ জন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, লোকজন আতঙ্কিত হয়েই বিপত্তি আরও বাড়িয়েছেন। হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা বলছেন, ‘‘কী বলছেন মশাই, আতঙ্কিত হব না! মনে আছে, কলকাতার আমরিতে আগুনে পুড়ে কত জন মারা গিয়েছিল?’’

ইতিমধ্যেই হাসপাতালে চলে আসে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় লোকজনও। তাঁরাও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গেই উদ্ধার কাজে হাত লাগান। এ দিন দুপুরে হাসপাতালে এসেছিলেন রাজনীতির কারবারিরাও। যদিও রোগী ও তাঁদের বাড়ির আত্মীয়দের একাংশের অভিযোগ, এই সব বিপদের সময় নেতারা এসে ভিড় আরও বাড়িয়ে দেন।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে এই মাত্রাতিরিক্ত ভিড় অবশ্য নতুন নয়। তবে এমন কাণ্ড এই প্রথম। যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে হাসপাতালের সমস্যা। এ দিন যেখান থেকে প্রথম ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় সেটা ছিল দোতলার দক্ষিণ দিক লাগোয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ঘর। হাসপাতালের এক নিরাপত্তরক্ষী বলছেন, ‘‘প্রথমে তো ভেবেছিলাম কোনও রোগী বোধহয় পালিয়ে যাচ্ছে। সে জন্য কয়েকজনকে বাধা দিই। কিন্তু পরেই বুঝতে পারি আগুন লেগেছে।’’ আগুনের কারণে লিফট বন্ধ ছিল। তালাবন্ধ ছিল আপদকালীন দরজাও। ২০১২ সালে তৈরি র‌্যাম্পও বন্ধ ছিল। ফলে দোতলা ও তিনতলা থেকে নীচে নামার উপায় বলতে একটাই সিঁড়ি। সে দিক দিয়ে সকলে একসঙ্গে নামতে গিয়েই এমন বিপত্তি। তবুও সেই সিঁড়ি দিয়ে নামতে বাধ্য হন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। তিনতলায় রয়েছে শিশু বিভাগ। সেখানে ধোঁয়া ছড়ানোয় শিশুদের নামিয়ে আনার জন্য হু়ড়োহুড়ি পড়ে যায়। ওই ভিড়ের চাপেই এমন অঘটন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। দুপুর ২টোর পর রোগীদের ফের ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। ওয়ার্ডে ফিরে জৈদুল শেখ ও জয়নাল আবেদিনেরা বলছেন, ‘‘প্রাণ হাতে করে পালিয়ে না গেলে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম গো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন