Health issues

‘নিজে ডাক্তারি নয়, জানান ডাক্তারকেই’

অনির্বাণবাবু জানান, ভাইরাসটির সঙ্গে মানবশরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে প্রদাহকারী সাইটোকাইন এবং অন্যান্য পদার্থের ক্ষরণ হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘটনা-১: বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তির জ্বর প্যারাসিটামল খেলেই নেমে যাচ্ছে। চার-পাঁচ দিন এমন চলার পরে দেখা গেল, জ্বর বেড়ে উঠে যাচ্ছে ১০২-১০৩ ডিগ্রিতে। আর কাজ হচ্ছে না প্যারাসিটামলে।

Advertisement

ঘটনা-২: করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি বাড়িতে আছেন। খুব একটা জ্বর আসছে না। এলেও খুবই হালকা। তাই তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, পালস অক্সিমিটারে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও পরীক্ষা করেননি। ৭-৮ দিন পরে তিনি খেয়াল করলেন, হাঁটাচলা করলে শ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসকের কাছে যেতেই তিনি তাঁর বুকের সিটি স্ক্যান করান। দেখা যায়, ফুসফুস পুরো সাদা! সেই সঙ্গে অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গিয়েছে ৮০-৮৫ শতাংশে।

করোনার অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই ধরনের সমস্যা বেশি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ডাক্তারেরা। উপরের দু’টি ঘটনাতেই তাঁদের বক্তব্য, প্রথম জনের ক্ষেত্রে নিজে থেকে ডাক্তারি করে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়া ঠিক হয়নি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ নেই দেখে চিকিৎসকের সঙ্গেই যোগাযোগ না-করায় শরীরে রোগ বাসা বাঁধার সময় পেয়েছে। সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা তাই বার বার সতর্ক করছেন, রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং তাঁর পর্যবেক্ষণে থাকা জরুরি।

Advertisement

ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, সংক্রমণের প্রথম পর্বে একটা সময়ের পরে জ্বর সারলেও শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই সব রোগীর সংখ্যাই বেশি, যাঁদের টানা ৭-৮ দিন জ্বর থাকছে। তার সঙ্গে কারও ডায়েরিয়া, গলা-হাত-পায়ে ব্যথা, শুকনো কাশির উপসর্গ থাকছে। বা আচমকাই শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নামতে শুরু করে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভাইরাসটির ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেনের ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং এই সব উপসর্গও দেখা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানান, ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পরে প্রথম পাঁচ থেকে দশ দিন বংশবিস্তার করে। তার পরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসটি আস্তে আস্তে নির্মূল হয়ে যায়। এর পরেই অনেকের ক্ষেত্রে শুরু হয় ‘সাইটোকাইন ঝড়’। সেটি কী?

অনির্বাণবাবু জানান, ভাইরাসটির সঙ্গে মানবশরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে প্রদাহকারী সাইটোকাইন এবং অন্যান্য পদার্থের ক্ষরণ হয়। এই ধরনের হাইপার ইমিউন বিক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন কোষ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘‘ভাইরাস যত না ক্ষতি করছে, ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতার উপাদানগুলি বেশি মাত্রায় নিঃসৃত হয়ে ক্ষতি করে তার চেয়ে বেশি। তার ফলে বহু প্রত্যঙ্গের (‘মাল্টি অর্গান’) ক্ষতি হয়। এমনকি এর প্রভাব পরবর্তী কালেও থেকে যাচ্ছে,’’ বলেন অনির্বাণবাবু। ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়ে বড় বিপদ বা ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার জন্যই সিবিসি, সিআরপি, ডি-ডাইমার পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

এসএসকেএমের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘বহু মানুষের যে মৃত্যু হচ্ছে বা শারীরিক পরিস্থিতি যে সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে, তার কারণ, তাঁরা বিষয়টিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন। বিপদ ডেকে আনছেন। করোনা কিন্তু চিকিৎসাযোগ্য ব্যাধি। প্রথম থেকে চিকিৎসা করলে একশো শতাংশ মৃত্যু কমানো যাবে। যাঁরা ৭-১০ দিন দেরি করে আসছেন, তাঁদের কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে। কিন্তু ভাইরাস দ্বারা চালিত ইমিউনিটি সিস্টেমের দরুন বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যে-বিপদ ধেয়ে আসছে, তাকে ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই প্রথম থেকেই চিকিৎসা শুরু করে যদি বোঝা যায়, কোন দিকটায় সমস্যা তৈরি হতে পারে, চিকিৎসকেরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাতে উপকার রোগীরই।’’ সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া তাই জরুরি বলে সৌমিত্রবাবুর অভিমত।

‘স্বাদ ও গন্ধ তো যায়নি। তা হলে কি করোনা হয়েছে!’— এক শ্রেণির মানুষের এমন সংশয় আরও বড় বিপদ ডাকছে, জানান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুনাংশু তালুকদার। তাঁর বক্তব্য, গত বারের থেকে এ বারের ভাইরাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। তাই সকলের স্বাদ-গন্ধ না-ও চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘গত বার ভাইরাসটি নাকে-গলায় কিছু দিন থাকছিল। সেই সময় নাক ও জিহ্বার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্বাদ-গন্ধ লোপ পাচ্ছিল। এ বার তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাস সরাসরি ফুসফুসে বা খাদ্যনালিতে যাচ্ছে।’’ তাই সব চিকিৎসকই বলছেন, ‘যদি মাত্র এক বার উপসর্গ দেখা দেয়, উপেক্ষা করবেন না। চিকিৎসককে জানান। নিজে চিকিৎসক হবেন না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন