সারদা গোষ্ঠী থেকে রোজ ভ্যালি, এমপিএস, পিনকন— অসংখ্য বেসরকারি লগ্নি সংস্থায় লাগাতার আর্থিক কেলেঙ্কারি দেখেও শিক্ষা বিশেষ হয়েছে বা হচ্ছে বলে প্রমাণ মিলছে না। চটজলদি চোখধাঁধানো মুনাফার লোভে এখনও বেসরকারি সংস্থায় টাকা ঢালছেন বঙ্গবাসী।
এক বছর আগে সরাসরি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে কাজ শুরু করেছে ‘ডিরেক্টরেট অব ইকনমিক অফেন্স’ (ডিইও)। বেশি মুনাফার লোভে বেসরকারি সংস্থায় লগ্নির ভূরি ভূরি উদাহরণ এই এক বছরেই তাঁরা পেয়েছেন বলে শুক্রবার জানান ডিইও-র অধিকর্তা বিভূতিভূষণ দাস।
বেআইনি লগ্নি সংস্থায় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ঠকেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তদন্তে নেমে মন্ত্রী, সাংসদ-সহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সতর্ক করা হচ্ছে মানুষকে। বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থা ছাড়া অন্য কোথাও লগ্নি করবেন না। কিন্তু টনক নড়েনি একটি বড় অংশের।
সারদার মতো লগ্নি সংস্থা টাকা নিয়ে মাত্র কয়েক মাস বা এক বছর পরে তা অনেকটা বাড়িয়ে ফেরতের আশ্বাস দিয়েছিল। ডিইও-র অধিকর্তা জানান, এখন টাকা নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস না-দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী বা পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। বিভূতিবাবুর কথায়, ‘‘টাকা নিয়ে তিন বছর পরে অনেক বেশি টাকার সিমেন্ট ফেরত দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।’’ এখন টাকা নিয়ে তিন বছর পরে বিলাসবহুল হোটেলে বিনা পয়সায় রাখার আশ্বাসও দেওয়া হয়। সম্প্রতি প্রলোভন দেখিয়ে এমন ভাবে টাকা তোলার অভিযোগে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে ডিইও।
এ দিন ডিইও-র ওয়েবসাইটের সূচনা করেন মুখ্যসচিব মলয় দে। অনুষ্ঠানে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। মলয়বাবু বলেন, আর্থিক অপরাধের ক্ষেত্রে এই বিভাগের অফিসারেরা আইনি ব্যবস্থা নেবেন। এই ধরনের অপরাধ যাতে না-ঘটে, তারও চেষ্টা চালানো হবে।
বিভূতিবাবু জানান, ২০১৫-র নয়া আইন অনুযায়ী রাজ্যে সক্রিয় প্রতিটি আর্থিক সংস্থাকে বাধ্যতামূলক ভাবে ডিইও-য় নিজেদের সম্পর্কে তথ্য জমা দিতে হবে। অন্যথা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে ওই আইনে। এ বার থেকে সাধারণ মানুষ ওয়েবসাইটে নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। কোনও সংস্থায় বিনিয়োগ করার আগে সেই সংস্থাকে ভরসা করা যাবে কি না, সেটাও জানা যাবে এই ওয়েবসাইট থেকে।