Cyclone Amphan

শাড়ি দিয়ে বৃষ্টির জল ধরার অপেক্ষায় জামিলারা

হাসনাবাদের পাটলি খানপুর পঞ্চায়েত এলাকা আমপানে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এখনও জনজীবন স্বাভাবিক নয়। অনেকে ত্রিপল-প্লাস্টিক টাঙিয়ে নদী বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

Advertisement

নির্মল বসু

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০৬:১৯
Share:

শাড়ি টাঙিয়ে বৃষ্টির জল ধরে রাখার চেষ্টায় এক গ্রামবাসী। নিজস্ব চিত্র

এক চিলতে বাড়ির উঠোনে গামলা, বালতি রাখা। তার উপরে টাঙানো রয়েছে পুরনো রঙচটা শাড়ি। কারও আবার বাড়ির সামনে খুঁটি পুঁতে টান টান করে বাঁধা হয়েছে এক খণ্ড কাপড়। নীচে গামলা পাতা।

Advertisement

‘পরিস্রুত পানীয় জল’-এর আপাতত এই হল সংস্থান!

হাসনাবাদের পাটলি খানপুর পঞ্চায়েত এলাকা আমপানে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এখনও জনজীবন স্বাভাবিক নয়। অনেকে ত্রিপল-প্লাস্টিক টাঙিয়ে নদী বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়ে আছেন। গ্রামবাসীরা জানালেন, দুর্যোগের পরে সপ্তাহ দুয়েক সরকারি জলের গাড়ি, পাউচ পৌঁছেছিল গ্রামে গ্রামে। আপাতত সেই ব্যবস্থা মুলতুবি রাখা হয়েছে। এ দিকে, এলাকায় পানীয় জলের যে দু-চারখানা নলকূপ আছে, সেখানে আমপানের পর থেকেই নোনা জল উঠছে। আর্সেনিক থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা গ্রামের মানুষের। তাই আপাতত আকাশের মুখ চেয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছেন গ্রামের মানুষ। শাড়ি-কাপড় টাঙিয়ে তার নীচে ধরে রাখা হচ্ছে বর্ষার জল।

Advertisement

বিকল্প কোনও উপায় কি নেই?

কল্পনা মণ্ডল, জামিলা বিবিরা বলেন, ‘‘রোজ পাঁচ-ছ’ কিলোমিটার পথ উজিয়ে বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আর জল টেনে আনতে পারছি না। তার থেকে এই ব্যবস্থা ভাল।’’ কেউ কেউ অবশ্য ২০ লিটার জলের ব্যারেল কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু সেই সামর্থ্য হাতে গোনা কয়েকজনেরই আছে সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামে। হাফিজুল গাজির কথায়, ‘‘বৃষ্টির জল ধরে রেখে দিব্যি খাওয়া যায়, রান্না করা যায়। কারও পেটের সমস্যা হচ্ছে না।’’ পানীয় জলের সমস্যা বহু বছর ধরেই ভোগাচ্ছে হাসনাবাদের এই সব গ্রামের মানুষকে। ফলে বৃষ্টির জল ধরে রাখার কৌশল তাঁদের অজানা নয়। গোটা পঞ্চায়েত এলাকার ১০-১২টা গ্রামেই বহু মানুষ এই ব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত বলে জানা গেল।

আমপানের আগে নলকূপের জল খাওয়া না-গেলেও রান্নাবান্না চলত। কিন্তু নদীর জল প্লাবিত হয়ে এলাকার সব নলকূপ নোনা জলের তলায়। ফলে সে জল পানযোগ্য নয়। এমনকি, স্নানযোগ্যও নয়। আপাতত চাহিদার অনেকটাই মিটছে বৃষ্টির জলে।

এ দিকে রাস্তাঘাট ভেঙে একাকার। তার জেরে দূর গাঁয়ে জল আনতে যেতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রাস্তার খারাপ অবস্থার জন্য টাকি-হাসনাবাদ থেকে জল সরবরাহের গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা কমল মণ্ডল, সুলক্ষণা সরকার, ওয়াহাব গাজি, আনোয়ারা বিবিরা জানান, বাইরে গরম প্রচণ্ড। কিন্তু মেপে মেপে জল খেতে হয়। বর্ষায় তবু কিছুটা সুরাহা হলেও গরমে পানীয় জলের সমস্যায় জেরবার হন এখানকার মানুষ। হয় বহু দূর থেকে পানীয় জল আনতে হয় নিজেদের। না হলে জল কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান পারুল গাজি বলেন, “এখানে জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল নেই বলে বড় কষ্ট। বাম আমলে জলের পাইপ পাতা হয়েছিল। পাইপ ফেটে কিছু দিন নোংরা জল পেয়েছি। তা-ও এখন বন্ধ। অনেকেই খাওয়ার জন্য বৃষ্টির জল ধরছে।” জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ, স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ কামাল গাজি বলেন, “পাটলি খানপুর-সহ তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার জলসঙ্কট মেটানোর জন্য পুকুর এবং নদীর জলকে পানযোগ্য তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছে।’’ বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় অবশ্য এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন