রেল চেয়ে সোচ্চার সীমান্ত

রেলহীন এই বিস্তীর্ণ জনপদের বহু লোক মনে করেন, করিমপুর-কৃষ্ণনগর কিংবা করিমপুর-বহরমপুর রাজ্য সড়কে প্রতি বছর যত দুর্ঘটনা ঘটে, রেল থাকলে সেই সংখ্যাটা অনেক কমে যেত। তা ছাড়া, স্বাধীনতার পর থেকে সীমান্ত-ঘেঁষা এই এলাকার সবচেয়ে বড় দাবি— ‘রেল চাই’।

Advertisement

গৌরব বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

প্রচারে ব্যবহৃত কাল্পনিক ছবি। নিজস্ব চিত্র

চৈত্রের দুপুরে মাইক মাথায় টুকটুক করে এগিয়ে চলেছে টোটো।

Advertisement

বাসের হর্ন, রিকশার ঘন্টি, ফেরিওয়ালার হাঁক ছাপিয়ে উঠে আসছে ট্রেনের ভোঁ....।

যা শুনে চমকে উঠছেন সীমান্তের লোকজন, ‘এ তো রেলের বাঁশি গো!’

Advertisement

রং-চটা সেই মাইক তখনও আউড়ে যাচ্ছে— ‘আপ শিয়ালদহ-করিমপুর লোকাল নাজিরপুর স্টেশন ছেড়ে আসছে। ডাউন ডোমকল শিয়ালদহ লোকাল দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে।’

রেলহীন চাপড়া, তেহট্ট, করিমপুর, জলঙ্গি, ডোমকলের লোকজন তো থ। ‘এ আবার কেমন মশকরা!’— বলতে-বলতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসছেন লোকজন। ঠিক তখনই ফের মাইক ফের বলছে, ‘যাত্রী সাধারণকে জানাচ্ছি, লাইন পারাপার করার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। এতে বিপদ ঘটতে পারে।’

কখনও ভ্যানরিকশা, কখনও টোটোর মাথায় মাইক বেঁধে গাঁ-গঞ্জে এমন প্রচার তো কতই হয়! কিন্তু রেললাইনের দাবিতে এ ভাবে প্রচার? নাহ্, এর আগে কখনও হয়েছে বলে মনে করতে পারছে না ডোমকল কিংবা তেহট্ট মহকুমা।

গত জানুয়ারিতে দৌলতাবাদ বাস দুর্ঘটনায় মারা যান ৪৪ জন। ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই করিমপুরের জমশেরপুর বিএন হাইস্কুলের শিক্ষক দূর্বাদল দত্ত রেলের দাবিতে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। তার পর থেকেই যাত্রা শুরু করে ‘করিমপুর ওয়ান্টস রেলওয়ে’। হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে তৈরি হয় গ্রুপ। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ফেসবুকে সদস্যের সংখ্যা ৩১,৯৫৮। চাপড়া, তেহট্ট, জলঙ্গি, ডোমকল-সহ আরও কিছু এলাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি সাব-গ্রুপ।

তবে অরাজনৈতিক এই আন্দোলন কিংবা রেলের দাবি-দাওয়া নিয়ে গ্রুপের সদস্যেরা শুধু আন্তর্জালেই আটকে থাকেননি। তাঁরা তৈরি করেছেন ‘ফোরাম’। সেটির সদস্যেরা একাধিক বার বৈঠকও করেছেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছে গণ-কনভেনশনের। আজ, রবিবার বিকেল ৩টেয় করিমপুর পান্নাদেবী কলেজে হচ্ছে সেই কনভেনশন।

যা নিয়ে রীতিমতো উত্তেজনায় ফুটছে দইয়েরবাজার থেকে দৌলতাবাদ। মাধ্যমিক শেষ হতেই জোরকদমে শুরু হয়েছে প্রচার। ওয়ালে পোস্ট ও দেওয়ালে পোস্টার সাঁটানোর কাজ চলছে। ‘করিমপুর ওয়ান্টস রেলওয়ে’ গ্রুপের আহ্বায়ক দূর্বাদল বলছেন, ‘‘ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। বাস্তবেও লোকজনকে যে ভাবে পাশে পাচ্ছি, তাতে আমরা আপ্লুত। যাঁরা বাড়ির দেওয়ালে পোস্টার সাঁটাতে দেখলে রে-রে করে তেড়ে আসেন, তাঁরাও আমাদের ডেকে ডেকে পোস্টার সাঁটাতে বলছেন।’’

রেলহীন এই বিস্তীর্ণ জনপদের বহু লোক মনে করেন, করিমপুর-কৃষ্ণনগর কিংবা করিমপুর-বহরমপুর রাজ্য সড়কে প্রতি বছর যত দুর্ঘটনা ঘটে, রেল থাকলে সেই সংখ্যাটা অনেক কমে যেত। তা ছাড়া, স্বাধীনতার পর থেকে সীমান্ত-ঘেঁষা এই এলাকার সবচেয়ে বড় দাবি— ‘রেল চাই’। ফি বছর রেলবাজেটের দিন লোকজন টিভির সামনে বসেন। কোনও বছর আশায় বুক বাঁধেন। কোনও বছর হতাশ হন। নেতা-মন্ত্রীদের দেখানো স্বপ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি কোনওটাতেই আর ভরসা রাখতে পারছিলেন না তাঁরা। এ ভাবেই চলছিল। চলছিল রেল না থাকা নিয়ে আক্ষেপ, হতাশা। কিন্তু দৌলতাবাদের দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিল। রেলের দাবিতে আওয়াজ তুললেন আমজনতা। যেখানে স্বপ্ন ও সচেতনতা মিলেমিশে একাকার।

টোটো এগিয়ে চলে অন্য পাড়ায়। বহু দূর থেকেও শোনা যায়, ‘আপ শিয়ালদহ-করিমপুর লোকাল....।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন