কুয়াশা যখন: তখন সকাল আটটা। এমনই ছবি ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
বেলা যত বাড়ছে, বেড়ে চলেছে গরম। সন্ধ্যার পরে এমন অবস্থা হচ্ছে যে, ফ্যানও চালাতে হচ্ছে। রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমোচ্ছেন অনেকে।
কিন্তু ভোরের আবহাওয়া পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে। চলছে ঘন কুয়াশার দাপট। সকাল ৯টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। মুশকিলে পড়ছেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। লেপ-কম্বলের মতো সোয়েটার, মাফলারও কেচে, শুকিয়ে আলমারিতে তুলে রেখেছিলেন তাঁদের অনেকে। ভোরের আকাশের চেহারা দেখে ফের সেগুলো নামাতে হচ্ছে। কিন্তু ওই শীতবস্ত্র পরে কিছুটা হাঁটলেই ঘাম হতে শুরু করছে।
শীত বিদায় নিয়েছে কিছু দিন হল। উৎসব চলছে পলাশ, শিমুলের। ডাকছে কোকিল। কিন্তু সাতসকালে কেন এমন কুয়াশা? বসন্তে আবহাওয়ার এই পরিবর্তনই বা কেন?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, শীতের শেষে বেশ কয়েক দিন হাল্কা কুয়াশা থাকে পরিমণ্ডলে। কিন্তু এখন যে-পরিমাণে কুয়াশা পড়ছে, কুয়াশার চাদর যে-ভাবে সূর্যকে ঢেকে রাখছে, সেটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। হাল্কা কুয়াশা এবং বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে নেমে আসা মেঘের মিশ্রণেই এই অস্বাভাবিক অবস্থা বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। অসময়ে বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে এই ধরনের হামলা চালানো মেঘ এল কোথা থেকে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়েছে। সেই বলয়ের প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণবঙ্গের বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস চলে এসেছে। ভোরে তাপমাত্রা কিছুটা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস আরও ভারী হয়ে নীচের দিকে নেমে আসছে। তাতেই এই অকালের ঘন কুয়াশা।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গে এলোমেলো হাওয়া বইছে। আবহবিদদের কেউ কেউ আবার বলছেন, উত্তুরে হাওয়া পুরোপুরি বন্ধ না-হওয়ায় দখিনা বাতাস গতি পাচ্ছে না। তার ফলে নীচের স্তরে থেকে যাওয়া মেঘ সরতে পারছে না।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন আবহবিদেরা। সোমবার কলকাতার সবর্নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার তা বেড়ে হয়েছে ২০.৬ ডিগ্রি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা এমনই থাকবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
আবহাওয়ার এই অস্থিরতায় পোয়াবারো জীবাণুদের। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়া অস্থির হলে শরীর নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় নেয়। এই অবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ নেয় জীবাণুরা। ফলে ঘরে ঘরে জ্বর, আন্ত্রিক, কাশি-গলাব্যথা— সব নিয়ে হানা দিচ্ছে জীবাণুরা। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থ, দুর্বল রোগী, শিশু এবং বয়স্কদের সাবধানে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।