বড়মার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী।—নিজস্ব চিত্র।
ছোট্ট ঘরের বাইরেটা তখন ভেসে যাচ্ছে উলুধ্বনিতে। দরজা দিয়ে ঢুকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাঁর সঙ্গে দেখা করতে প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের সেই ‘বড়মা’ তখন মেঝেতে পাতা গদিতে বসে রয়েছেন। আলতো ভাবে কী যেন চিবোচ্ছেন। হয়তো পান!
মোদী সটান তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলেন। তার পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘শরীর কেমন আছে?’’ ‘বড়মা’ সে প্রশ্ন যেন বুঝতেই পারলেন না। পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর করা প্রশ্নটা ফের করলেন ‘বড়মা’কে। পাশে বসা কিশোরীটি এ বার তাঁকে বললেন, ‘‘তোমার শরীর এখন কেমন, উনি জিজ্ঞেস করছেন।’’
কয়েক হাত দূর থেকে বোঝা গেল না, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে তিনি কী বললেন। এ বার মোদীকে ‘মা’য়ের শরীর নিয়ে বলতে শোনা গেল মঞ্জুলকে। এক বার নিজের মাথার কাছটায় আঙুল ঘোরাতেও দেখা গেল তাঁকে। সাদা কাপড়, বটল গ্রিন রঙের সোয়েটার আর সাদা-সবুজে মেশানো কম্বল গায়ে জড়িয়ে ‘বড়মা’ তখন পান চিবোচ্ছেন।
আরও পড়ুন: মেদিনীপুরের পর ঠাকুরনগরেও চরম বিশৃঙ্খলা, মোদীর সভায় আহত কয়েক জন
এর পর মোদী হাত জোড় করে নমস্কার করলেন ‘বড়মা’কে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতি নমস্কার করলেন তিনিও। ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠের সভার উদ্দেশে রওনা হলেন মোদী।
কয়েক দিন আগেই মোদী-বড়মার এই সাক্ষাৎ নিয়েই জোরদার বিতর্ক শুরু হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের তরফে শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী এসে বড়মাকে প্রণাম করবেন। তারই পাল্টায় রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছিলেন, ‘‘প্রণাম গ্রহণ তো দূরের কথা, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বড়মা দেখাই করবেন না।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘বড়মা যদি দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন, যদি বলেন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করব না, তা হলে উনি কি জোর করে দরজা ভেঙে ঢুকবেন?’’
জ্যোতিপ্রিয়র এই বক্তব্যের পর রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন, তিনি বড়মাকে প্রণাম করবেন, তা হলে দরজা ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না।’’
আরও পড়ুন: হিংসার আশ্রয়ে দিদি: ঠাকুরনগর থেকে আক্রমণে মোদী, বাংলা থেকেই বাজিয়ে দিলেন ভোটের দামামা
শনিবার যদিও ‘বড়মা’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেখা করার পর তৃণমূল সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির বড় ছেলে প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘‘মা তো ভাল করে কথাই বলতে পারেন না। গোটাটাই লোক দেখানো। মোদী এখানে এসে ঠাকুরকে অসম্মান করেছেন। উনি রাজনীতি করার চেষ্টা করেছেন মতুয়াদের নিয়ে।’’
প্রধানমন্ত্রীর সভা শেষ হওয়ার পর এ দিন তৃণমূল ঠাকুরনগরে পাল্টা মিছিল করে। গোটা ঠাকুরবাড়ির ‘গৈরিকীকরণ’ করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন এলাকার তৃণমূল কর্মীরা। সেই মিছিলে মমতাবালাও ছিলেন।