—ফাইল চিত্র।
সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম ভট্টাচার্য, সঞ্জয় দে। দু’জন স্কুলশিক্ষক, একজন কলেজের শিক্ষাকর্মী। তিনজনেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) পদাধিকারী। এঁদের তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আশুতোষ কলেজ-সহ দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু কলেজে ভর্তির দালালচক্রে প্রধান মদতদাতা এঁরা ।
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের শিক্ষাকর্মী সঞ্জয়বাবু অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। বরং তাঁর দাবি, বাইরে থেকে দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা ভর্তি করিয়ে দেবে বলে অভিভাবকদের থেকে টাকা নেয়। কিন্তু ভর্তি করিয়ে দিতে পারে না। যাঁরা এঁদের টাকা দেন তাঁদের অনেকের নাম কলেজের নিয়ামমাফিকই মেধা তালিকায় ওঠে। তখন দালালরা দাবি করেন, কাজটা তাঁরা করে দিয়েছেন।
তবে শিক্ষামহলের অভিযোগ, টিএমসিপির দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি সঞ্জয়বাবু যা-ই বলুন ওই এলাকার কলেজগুলিতে তাঁর প্রবল প্রভাব, যাতায়াত অবাধ। সঞ্জয়বাবু অবশ্য তা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক। ওঁরা আমন্ত্রণ জানালেই শুধু যাই।’’
মধ্যমগ্রাম বিবেকানন্দ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র গৌতমবাবু সোদপুরের এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তবে তাঁকে বেশির ভাগ সময়ই আশুতোষ কলেজের আশেপাশে দেখা যায় বলে অভিযোগ। টিএমসিপি সহসভাপতি গৌতমবাবু যদিও এ দিন দাবি করলেন, তাঁকে নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘‘সরস্বতীপুজোর দিন আশুতোষ কলেজে শেষ গিয়েছিলাম। তার পর আর যাইনি। আমার নামে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’’
দক্ষিণ কলকাতার অন্য একটি স্কুলের শিক্ষক সার্থকবাবু। কলকাতা জেলা টিএমসিপি-র কার্যকারী সভাপতি তিনি। আপাতত ডেপুটেশনে জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে কর্মরত। যদিও অভিযোগ, আশুতোষ কলেজেই তাঁকে বেশি দেখা যায়। সার্থকবাবুর যুক্তি, তিনি ওই কলেজের প্রাক্তনী এবং প্রাক্তনী সংসদের পদাধিকারী। কলেজে ঢুকলে অধ্যক্ষের সম্মতি নিয়েই ঢোকেন। তবে ভর্তির দালাল-চক্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের অভিযোগ মানতে চাননি সার্থকবাবু।
শিক্ষা মহলের একাংশের অবশ্য অভিযোগ— কলেজে যান বা না যান, দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ার উপর এই তিন জনেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। প্রশ্ন হল— যাঁদের নিয়ে এমন বিতর্ক, পড়াশোনার পাট বহুদিন আগে চুকিয়েও এঁরা কলেজে কলেজে এমন দাপট কী করে দেখাচ্ছেন? এই অভিযোগের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে ক্ষুব্ধ পার্থবাবু বলেন, ‘‘উড়ো চিঠির ভিত্তিতে কোনও মতামত
দেব না।’’
কিন্তু গৌতমবাবু এবং সার্থকবাবু দু’জনে স্কুলশিক্ষক হয়ে কী করে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে থাকেন অথবা পঞ্চাশোর্ধ সঞ্জয়বাবুই বা আর কত দিন ছাত্র সংগঠনের পদাধিকারী থাকবেন সে নিয়ে শিক্ষামহলে রীতিমতো বিস্ময়ের স়ৃষ্টি হয়েছে। টিএমসিপি রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এঁরা আমার অনেক আগে থেকে টিএমসিপির পদাধিকারী। দল যা ভাল বুঝেছে তাই করেছে। আমি এঁদের সম্মান করি।’’ তবে জয়া জানান, টিএমসিপি’র কেউ টাকা নিয়ে ভর্তি করাতে চাইলে বিষয়টি পড়ুয়া, অভিভাবকেরা সরাসরি তাঁকে জানাতে পারেন।