এভাবেই পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার হয় দম্পতির। —ফাইল ছবি
এফআইআর-এ নামই নেই। অথচ কাকদ্বীপে দম্পতির রহস্যমৃত্যুতে এমনই ৮সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা।
সিপিএমের অভিযোগ, পুরোটাই সাজানো মামলা। দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীর মন্তব্য, ‘‘স্বাধীন ভারতে এর চেয়ে নির্লজ্জ ভাবে আর কোনও মামলা সাজানো হয়নি।’’সিবিআই তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে দলের তরফে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ মে রাতে। পরের দিনই ছিল পঞ্চায়েত ভোট। ওই রাতে নিজেদের ঘরের মধ্যেই পুড়ে মৃত্যু হয় সিপিএম কর্মী দম্পতি দেবপ্রসাদ দাস ও উষারানি দাসের। ঘটনায় সিপিএমের অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের বিরোধিতা করায় শাসক দলের লোকজনই পুড়িয়ে মেরেছে দাস দম্পতিকে। দেবপ্রসাদবাবুর ছেলে দীপঙ্কর সেই সময় দাবি করেন, তিনি ক্যাটারিংয়ের কাজ সেরে ফেরার সময় অমিত মণ্ডল, অশোক মণ্ডলের মতো স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে দেখেছিলেন।
আরও খবর: চাকরির টোপে এনে সোজা ডান্স বারে, হাওড়ায় উদ্ধার ৫৫ তরুণী
সেই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের উপস্থিতিতে এডিজি আইনশৃঙ্খলা অনুজ শর্মা জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, শর্ট সার্কিটের জেরে আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে ওই দম্পতির। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল এলাকা। তাছাড়া শর্ট সার্কিট হলে যেভাবে বিদ্যুতের তার, সুইচ বোর্ড বা বৈদ্যুতিন সামগ্রী যেভাবে পুড়ে যাওয়ার কথা, সেরকম নমুনা মেলেনি। ফলে প্রথম থেকেই এই মামলা নিয়ে একাধিক সন্দেহের অবকাশ ছিল।
এফআইআর-এর কপিতে নাম যাঁদের তাঁদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। আর যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের কারও নাম এফআইআর-এ নেই। —নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: সাগর, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ... অটলের অস্থি নিয়ে রাজ্যের পাঁচটি প্রান্তে যাচ্ছে বিজেপি
যদিও ১৯ মে পুলিশ নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে খুনের মামলা রুজু করে। এফআইআরে ১০ জনের নাম ছিল। কিন্তু ঘটনার তিন মাস পরেও তাদের কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
শেষ পর্যন্ত শুক্রবার তেলঙ্গানা থেকে বিদ্যুৎ হালদার নামে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তাঁর নাম এফআইআরে ছিল না। পুলিশের দাবি, তাঁকে জেরা করে গত কয়েকদিনে আরও ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আট জনই সিপিএম কর্মী এবং তাঁদের কারও নামই এফআইআরে নেই।
স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘ঘটনার ২০ ঘণ্টার মধ্যে নবান্নে দাঁড়িয়ে এডিজি আইনশৃঙ্খলা বলেছিলেন, শর্ট-সার্কিট থেকে আগুন লেগে পুড়ে ওঁদের মৃত্যু হয়েছে। ওঁরা এখন বলছেন, খুন! কে ঠিক?’’ তিনি আরও দাবি করেন,নিহতদের ছেলে দীপঙ্কর দাসের বয়ান রেকর্ড করা হয় ২ মাস পরে। সে দিন ঘটনার পর যাঁরা লাশ তুলে আনতে পুলিশকে বাধা দিয়েছিলেন, তাঁদেরই ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শমীকবাবুর দাবি।তাঁর কথায়, ‘‘এফআইআরে যার নাম এক নম্বরে ছিল সেই অমিত মণ্ডল নামে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য। সে-ই পুলিশকে এক এক করে বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে। তার পর বাড়ি থেকে তুলে এনে ওই ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ হালদার নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম এফআইআরে ছিল না।’’ শমীকবাবুর মন্তব্য, ‘‘ওকে হয়তো রাজসাক্ষী করার মতলব রয়েছে। আসলে এ রাজ্যে একমাত্র তোলাবাজ, খুনিরাই পুলিশের হাতে নিরাপত্তা পাবে। বাকিদের কোনও নিরাপত্তাই নেই।’’
বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।