বিক্ষোভ: পুলিশি হামলার প্রতিবাদে পথে সাংবাদিকেরা। মঙ্গলবার শহরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
সোমবার বামফ্রন্টের নবান্ন অভিযানের দিন সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় মৌখিক দুঃখপ্রকাশ করলেও দায় নেননি লালবাজারের কর্তারা। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়ে দিলেন, নবান্ন অভিযানের দিন যে সব সাংবাদিক পুলিশের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন, তাঁদের সবার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলবে লালবাজার। খতিয়ে দেখা হবে পুলিশি হামলার সব ভিডিও ফুটেজ। তার ভিত্তিতে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের উপরে হামলা নিয়ে কয়েক জন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছে বলে এ দিন কবুল করেন সিপি। তার মধ্যে এডিসিপি (দক্ষিণ) অপরাজিতা রাইয়ের নাম সিপি নিজেই করেন। প্রসঙ্গত, বামেদের অভিযান শেষ হওয়ার পরেও অপরাজিতার নেতৃত্বেই সোমবার সাংবাদিকদের উপরে নির্মম ভাবে লাঠিচার্জ করা হয়। তবে সিপি এ-ও জানান, তদন্ত ছাড়া কারও বিরুদ্ধেই তিনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। সিপি-র ব্যাখ্যা, ‘‘অনেক সময় সাংবাদিক সেজে বাইরের লোক ভিড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। এমন কেউ পুলিশকে উস্কানি দিয়েছে কি না, তা দেখার জন্যও তদন্ত দরকার। কারণ, আমাদের কাছে এমন রিপোর্ট রয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবারের ঘটনার দায় কলকাতা পুলিশের ঘাড়েই চাপিয়েছে নবান্ন। পুলিশ কেন বিনা প্ররোচনায় ‘বাড়াবাড়ি’ করল, তার জবাবদিহিও চাওয়া হয়। এই নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরকে এক দফা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। তাতে অবশ্য পুলিশি বাড়াবাড়ির কথা স্বীকার করা হয়নি। তবে নবান্ন যে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় খুশি নয়, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেই আঁচ পেয়েই সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এক প্রতিনিধি দলকে ওই প্রতিশ্রুতি দেন সিপি।
মঙ্গলবার বীরভূম থেকে কলকাতা ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে গিয়ে তিনি বামেদের অভিযান এবং পুলিশি বাড়াবাড়ি নিয়ে বৈঠক ডাকেন। সেখানে ছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনের বড় কর্তারা। আলোচনা হয় বৃহস্পতিবারের বিজেপির লালবাজার অভিযান নিয়েও। লালবাজারকে সতর্ক করা হয়েছে, বিজেপির অভিযানের দিন যেন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
আরও পড়ুন:হুঁশিয়ারি পথে, যৌথ প্রতিবাদ বিধানসভাতেও
নবান্নের ‘মুড’ বুঝেই এ দিন সিপি জানান, কেন সোমবার সাংবাদিকদের উপর হামলা হলো, তার ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই। তাঁর কথায়, ‘‘সেই জন্যই তদন্ত করতে চাইছি। ওই দিন যাঁরা মার খেয়েছেন কিংবা পুলিশ যাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ, তাঁদের সবার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চাই।’’ নগরপালের আশ্বাস, ‘‘২৫ মে-র পরেই পুরোদমে তদন্তের কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।’’
পুলিশের ঘায়ে কমবেশি আহত হন বহু। মঙ্গলবার তাঁর প্রতিবাদে রবীন্দ্রসদন থেকে লালবাজার পর্যন্ত মৌন মিছিল করেন সাংবাদিকেরা। পরে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করে দোষী পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের শাস্তির দাবি জানান।
কিন্তু আবারও যে এমন ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? সিপি-র আশ্বাস, সাংবাদিকদের জন্য লালবাজার বিশেষ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করবে। রিপোর্ট করতে আসা সাংবাদিকরা তা পাবেন। কিন্তু যে ভাবে সাংবাদিকরা কাজ করেন, তাতে কি সবাইকে জ্যাকেট দিয়ে চিহ্নিত করা সম্ভব? রাজীব কুমার বলেন, ‘‘একটা চেষ্টা তো করে দেখা যাক।’’