ঘুম ভাঙতেই পুলিশের জালে সদাই

সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। শেষমেশ আশ্রয় নিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। আর ফেরার সেই নেতাই ধরা পড়লেন এক প্রাক্তন সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়িতে! গত ২৪ অক্টোবর চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধারে গিয়ে আক্রান্ত হন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে সেখানকারই বাসিন্দা সদাই শেখের। এর দু’ দিন পরেই ঘটে যায় মাখড়া-কাণ্ড। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে ওই দিন তিনটি খুন হয়। মারা যান দুই তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেল এবং শেখ সুলেমান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়ুই ও মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share:

সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। শেষমেশ আশ্রয় নিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। আর ফেরার সেই নেতাই ধরা পড়লেন এক প্রাক্তন সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়িতে!

Advertisement

গত ২৪ অক্টোবর চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধারে গিয়ে আক্রান্ত হন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে সেখানকারই বাসিন্দা সদাই শেখের। এর দু’ দিন পরেই ঘটে যায় মাখড়া-কাণ্ড। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে ওই দিন তিনটি খুন হয়। মারা যান দুই তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেল এবং শেখ সুলেমান। প্রাণ যায় স্থানীয় যুবক তথা বিজেপি কর্মী শেখ তৌসিফ আলিরও। ওই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে তিনটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু হয়। তৌসিফের পরিবার ছাড়া বাকি অভিযোগগুলিতে সদাইয়ের নামই উটে আসে। তার ভিত্তিতেই এত দিন পুলিশ ওই বিজেপি কর্মীকে খুঁজছিল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পাড়ুই থানা এলাকায় ২০০৩ সাল নাগাদ সদাই সিপিএম সমর্থক হিসেবে রাজনীতি শুরু করেছিলেন। স্থানীয় মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েত এলাকায় সিপিএমের মিছিল-সভাতেও তাঁকে দেখা যেত। কিন্তু কখনও সদস্যপদ পাননি। বছর দু’য়েকের মধ্যেই সদাইয়ের বিরুদ্ধে মারধর, বাড়িতে চড়াও হওয়ার মতো নানা অভিযোগ আসতে শুরু করে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভরত পালের দাবি, “দল সদাইকে প্রথমে সতর্ক করে। পরে তাঁর সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করা হয়। ২০০৫ সালে সদাই তৃণমূলে যোগ দেয়।” পুলিশের একটি সূত্রের খবর, তৃণমূলে আসার পরে এলাকায় সদাইয়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ সালে এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করে সদাই তৃণমূলের ভোট বাড়ায় বলে সিপিএমের অভিযোগ। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে বামেদেরই দায়ের করা একটি মামলায় পাড়ুই থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েত ও আশপাশের এলাকায় কার্যত সদাইয়ের নেতৃত্বেই তৃণমূল দল পরিচালিত হতে শুরু করে। গত পঞ্চায়েত ভোটে ব্লক সভাপতি জাফারুলের নেতৃত্বে ইলামবাজারের সব ক’টি পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, মঙ্গলডিহি, বাতিকার, বনশঙ্কা ও অবিনাশপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি মনোনয়নপত্রও জমা না পড়ার নেপথ্যে ছিলেন সদাই শেখ-ই।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের সঙ্গে সদাইয়ের গণ্ডগোল শুরু হয় পঞ্চায়েতগুলিতে নতুন বোর্ড গঠনের পর থেকেই। ওই এলাকার এক তৃণমূল নেতা বলেন, “দলকে জেতানোর পর থেকেই সদাই পাড়ুইয়ের আটটি অঞ্চলেই ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে। বেশ কিছু পঞ্চায়েতের নানা কাজ নিয়ে ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাঁধে। এমনকী, সদাই জাফারুল ইসলামের সঙ্গেও বচসায় জড়ায়। তার পরেই তাঁকে ছেটে ফেলার সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা হয়ে যায়।” লোকসভা ভোটের পরপরই সদাইকে দল থেকে তাড়িয়ে দেয় হয় বলে দলীয় সূত্রের খবর। তৃণমূল ছেড়ে সদাই এ বার নাম লেখান গেরুয়া শিবিরে। ওই সময়ই এলাকায় বিজেপির অন্যতম নেতা হয়ে ওঠেন সদাই। এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখতে দু’দলের মার-পাল্টা মারও অনিবার্য হয়ে ওঠে। যার সূত্রেই জুড়ে রয়েছে চৌমণ্ডলপুর ও মাখড়ার ঘটনা। তাতেই নাম জড়িয়ে যায় সদাই শেখের।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার গভীর রাতে সিউড়ি থেকে বাড়তি বাহিনী এনে মহম্মদবাজারের বাড়িটি পুলিশ ঘিরে ফেলে। তত ক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সদাই। রাত দেড়টা নাগাদ ঘরে ঢুকে ঘুম থেকে তুলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। যার বাড়িতে সদাই ধরা পড়েছেন, সেই নুর বক্তার শেখ সিপিএমের ভাঁড়কাচা লোকাল কমিটির সদস্য। সদাই তাঁর পুত্রবধূ তথা মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সিপিএম সদস্য কলি বিবির দূর সম্পর্কের আত্মীয়। নুর দাবি করেন, “শনিবার দুপুরে বৌমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে ছেলেটি আমাদের বাড়িতে উঠেছিল। ওঁকে আমরা চিনতাম না। পুলিশ যে ওঁকে খুঁজছে সে কথাও জানতাম না। জানলে কিছুতেই ঘরে ঢুকতে দিতাম না।” অন্য দিকে, রবিবারই সদাইয়ের আইনজীবী নির্মল মণ্ডল অভিযোগ করেন, জেরায় পুলিশ তাঁর মক্কেলকে মারধর করেছে। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন