মোবাইলের খোঁজে সন্ময়কে জেরা পুলিশের

সামাজিক মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্মানহানি করে লেখার অভিযোগে পুরুলিয়া পুলিশ বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র এবং কাউন্সিলর সন্ময়বাবুকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা  

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:২০
Share:

—ফাইল চিত্র।

একদিকে পুরুলিয়ার পুলিশের সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস, অন্য দিকে পথে নেমে বিক্ষোভ প্রতিবাদ— আপাতত এই দুই কৌশল নিয়েই সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির ঘটনার মোকাবিলা করতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস।

Advertisement

সামাজিক মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্মানহানি করে লেখার অভিযোগে পুরুলিয়া পুলিশ বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র এবং কাউন্সিলর সন্ময়বাবুকে গ্রেফতার করে। দু’দিনের পুলিশি হেফাজত শেষে আজ, রবিবার ফের তাঁকে আদালতে তোলার কথা। তার আগে এর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে আজ সকালেই এক ঘণ্টা রাস্তা অবরোধের ডাক দিয়েছে যুব কংগ্রেস। আদালতে তোলার আগে শনিবার দিনভর জেরায় পুলিশ জানার চেষ্টা করছে কোন মোবাইল বা গ্যাজেট থেকে সন্ময়বাবু লেখাগুলো সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করতেন। জেরার পরে পুরুলিয়ার পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সন্ময়বাবু যে সব গ্যাজেট থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন লেখা আপলোড করতেন, তা উদ্ধার করতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উদ্ধারের পরে তা বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে।’’

সাত বছর আগে ব্যঙ্গচিত্র ফরোয়ার্ড করার অভিযোগে অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতারের ঘটনার স্মৃতি উস্কে দিয়ে সন্ময়-কাণ্ডে তৎপর হয়েছে সব বিরোধী দল এবং নানা সংগঠন। দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল এ দিন সন্ময়বাবুর আগরপাড়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে রাজ্য সরকারের বিদ্বেষমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে জয়প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘সন্ময়বাবুর মতো প্রতিবাদীর কণ্ঠরোধের ব্যর্থ চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। এ রাজ্যে যে গণতন্ত্র নেই এবং মুখ্যমন্ত্রীর স্বৈরাচার চলছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। আমরা সন্ময়বাবুর পাশে আছি।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পরে বলেন, ‘‘সন্ময়বাবুর মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে ওঁকে আইনি সাহায্যও দিতে রাজি আমরা।’’

Advertisement

দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ এনে যে ভাবে সন্ময়বাবুকে হেনস্থা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সঙ্গেই সরব হয়েছেন সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। শুক্রবারের মতোই কংগ্রেসের সঙ্গে আন্দোলনে বামেরাও শামিল হবে। সন্ময়বাবুকে গ্রেফতারের ঘটনাকে উল্লেখ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজ্যে ‘সুপার এমার্জেন্সি’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে বাম, বিজেপি যে ভাবে সন্ময়বাবুর পাশে দাঁড়িয়েছে, তাকে ‘আঁতাঁত’ বলে কটাক্ষ করেছেন উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে কোনও দল পাশে দাঁড়ালে তাকে কোনওভাবেই আঁতাঁত বলতে রাজি নয় কংগ্রেস।

সন্ময়বাবুর দাদা তন্ময়বাবু এবং বোন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এখন পুরুলিয়ায়। তাঁদের পাশাপাশি দলের তরফে সন্ময়বাবুর আইনজীবীর বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ও বাঘমুন্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো। আর কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র কথা বলছেন আইজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (শহরাঞ্চল) সভাপতি তাপস মজুমদার সন্ময়বাবুর আগরপাড়ার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

দলের জেলা পর্যবেক্ষকদের নিয়ে সাংগঠনিক আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা করতে দু’দিনের কর্মশালা শুরু হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে। সেখানেও সন্ময়বাবুর প্রসঙ্গ উঠেছিল। এ দিন সন্ধ্যায় এআরসি-র বিরোধিতায় রাজাবাজারে এক সভায় লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সমালোচকদের কণ্ঠ বন্ধ করতে কোথাও সংস্থাকে, কোথাও পুলিশকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি আর তৃণমূল রাজনৈতিক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এ ভাবে আমাদের দুর্বল করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন