জিতেই মন্ত্রী কুজুর, থানায় বিলি হল লাড্ডু

চাকরি বাজি রেখে ভোটের ময়দানে নামার হাতে-গরম পুরস্কার পেলেন জলপাইগুড়ি জেলার সদ্য প্রাক্তন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর। তৃণমূলের অন্দরে তো বটেই, পুলিশের মধ্যেও অনেকেরই মত এমনই।

Advertisement

রাজু সাহা

কুমারগ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

জেমস কুজুর

চাকরি বাজি রেখে ভোটের ময়দানে নামার হাতে-গরম পুরস্কার পেলেন জলপাইগুড়ি জেলার সদ্য প্রাক্তন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর। তৃণমূলের অন্দরে তো বটেই, পুলিশের মধ্যেও অনেকেরই মত এমনই।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় যখন দলনেত্রী কুজুরের নাম ঘোষণা করছেন মন্ত্রী হিসেবে, তখন ডুয়ার্সের একাধিক থানায় ওসি-আইসির ঘরে টিভির সামনে চাপা গুঞ্জন। সঙ্গে সঙ্গেই কুজুর সাহেবের মোবাইলও ‘জ্যাম’। প্রাক্তন এএসপি-র হাউস গার্ড থেকে থানার আইসি, সকলেই ফোনের লাইনে। কেউ তো থানায় মিষ্টি আনিয়ে খাইয়ে দিলেন সহকর্মীদের। উত্তরবঙ্গে ভুটান সীমান্তের অসম লাগোয়া কুমারগ্রামের একাধিক চা বাগানেও আবির উ়ড়ল, বিলোনো হল লাড্ডু। মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরে হবে আসল উৎসব— চা বাগানে মাদলের সঙ্গে নাচের ফাঁকে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন একদল শ্রমিক।

কর্মজীবনে রাজনৈতিক দলের জয়োল্লাস, মিছিল, উৎসবের সময়ে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ‘ডিউটি’ করেছেন অনেক বার। এ বার তাঁকে ঘিরে এমন উচ্ছ্বাসে কী করণীয়, তা যেন ঠিক ভেবে পাচ্ছিলেন না কুজুর সাহেব। তিনি বললেন, ‘‘অনেক বড় দায়িত্ব দিচ্ছেন দলনেত্রী। আমি নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’’

Advertisement

কুজুর যে কুমারগ্রাম থেকে জিতেছেন, তা এত দিন বাম দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে জেতার সুবাদেই যে পুরস্কার মিলেছে, সেটাও একান্তে মানছেন এই ডব্লুবিপিএস অফিসার। কর্মজীবনে তাঁকে নানা কৌশলে পদোন্নতিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভও রয়েছে। চা-বাগানে বড় হয়ে ওঠা জেমস কুজুরের জীবনযাপন সাদামাটা। জেলা পুলিশের উঁচু পদে থাকলেও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে সকলের সঙ্গে মিলে হইহই করে মেতে উঠতেন। ভোটের সময়ে চা-শ্রমিক মহল্লায় গিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এখন তাঁকেই সামনে রেখে ডুয়ার্সের চা-বলয়ে প্রভাব বাড়াতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

আলিপুরদুয়ার থেকে জেমস কুজুরকেই কেন বেছে নেওয়া হল, তা নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকের যুক্তি, বরাবরই মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ তিনি। সে কারণেই দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়েও জেমস কুজুর আজ, শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন।

সেই সঙ্গে চা-বলয়ের সঙ্গে প্রাক্তন পুলিশ কর্তার যোগাযোগও তাঁকে বাড়তি সুবিধে দিয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূলের অনেকেই। এ বারের ভোটে উত্তরবঙ্গের প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী জনসভাগুলিতে বারবার চা বাগান এবং শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কথা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। এ বারের ভোটে ডুয়ার্সের চা-বলয়ের একটি বাদে সব আসনই তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। সে কারণে মন্ত্রিসভায় চা-বলয়ের প্রতিনিধি থাকার যৌক্তিকতা আরও বেড়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

তৃণমূলের যে দিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়, সে দিনও জলপাইগুড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদেই ছিলেন কুজুর। এক জন পুলিশ কর্তাকে শাসক দল প্রার্থী করায় বির্তক তৈরি হয়েছিল। বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল। তবে সে বির্তক ভোটে ছাপ ফেলেনি। প্রথম বার বিধায়ক হয়েই এ বার মন্ত্রিসভায় পৌঁছে গেলেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন