ড্রাগেই সর্বনাশ

সাঁইথিয়ায় ছড়িয়েছে নেশার জাল। রুখতে সচেষ্ট স্থানীয়রা। প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা। লিখছেন ভাস্করজ্যোতি মজুমদার।চোলাই মদের বাড়বাড়ন্ত দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই থেকে সাঁইথিয়ায় মদ বিক্রিতে কিছুটা রাশ টানা গেলেও সেই জায়গায় জাঁকিয়ে বসছে ড্রাগের মত বিভিন্ন মারাত্মক নেশা। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন প্রশাসনও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৪৪
Share:

সাঁইথিয়ায় প্রকাশ্য রাস্তাতেই চলছে সিগারেটের মশলায় গাঁজা মেশানোর কাজ। ছবি: অনির্বাণ সেন।

চোলাই মদের বাড়বাড়ন্ত দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই থেকে সাঁইথিয়ায় মদ বিক্রিতে কিছুটা রাশ টানা গেলেও সেই জায়গায় জাঁকিয়ে বসছে ড্রাগের মত বিভিন্ন মারাত্মক নেশা। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন প্রশাসনও।

Advertisement

সম্প্রতি সাঁইথিয়া হাসপাতাল লাগোয়া আট নম্বর ওয়ার্ডের বাউরি পাড়ায় মদ নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে তিন জন যুবকের আত্মহত্যার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। চোলাই মদ বিক্রি বন্ধ করার জন্য পুর কর্তৃপক্ষও এলাকায় মাইকে প্রচার শুরু করেন। তাতেও বিশেষ কাজ না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ঠেক গুলিতে তল্লাশি শুরু করেন। সেই সময় এ রকমই একজন বেআইনি কারবারি ওই দলের কয়েকজন মহিলার উপর আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেই থেকে চোলাইয়ের দাপট কিছুটা কমেছে। তবে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি।

শহরের বিভিন্ন গলি ঘুঁজির গুমটিগুলিতে চলে নেশার জিনিসের কারবার। সাংকেতিক নামে চলে মদ, গাঁজা বা কেমিক্যাল ড্রাগের কেনাবেচা। নেশাড়ুদের থেকে জানা যায়, চায়ের দোকানে হল্যান্ডের চা, রামের চা বা ভাইয়ের চা বললে এক এক রকমের বিদেশি মদ হাত বদল হয়ে যায়। গাঁজার সাংকেতিক নাম মিটার। গাঁজা খাওয়ার কলকেকে বলা হয় মেশিন। ১০টাকা থেকে ২৫টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মাপের পুরিয়ায় গাঁজা বিক্রি হয়। সিগারেটের মধ্যে গাঁজা ভরে বিক্রির চলও দীর্ঘ দিনের। এই নেশা উচ্চবিত্ত নেশাড়ুদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। নেশাড়ুরা জানান, গাঁজা খাওয়ার হাতির দাঁতের ছিলিমও কিনতে পাওয়া যায়। আর এই সমস্ত নেশাড়ুদের ফাইফরমাশ খাটে বেশ কিছু ছোট ছেলে। মদ গাঁজা কিনে এনে দেওয়ার বিনিময়ে তারা নেশার ভাগ পায়।

Advertisement

মদ গাঁজাতেই আটকে নেই সাঁইথিয়া। শহরে চলে ডেনড্রাইড, কাফ সিরাপ থেকে শুরু করে ব্রাউন সুগার, হেরোইন-সহ বিভিন্ন কেমিক্যাল নেশাও। সূত্রের খবর, ঘুমের এবং ব্যাথা কমানোর ওষুধ দিয়ে নেশা করার চল দিন দিন বাড়ছে। সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, এই সমস্ত নেশার ফলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং স্নায়ু ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। নেশাড়ুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়। এই ধরণের আত্মহত্যার বেশ কিছু নজির শহরে রয়েছে বলে দাবি করেন ওই চিকিৎসক।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাঁইথিয়া বাস স্ট্যান্ড, স্টেশন, হাসপাতাল চত্ত্বর এবং নদীর চরে সকাল থেকে রাত অবধি নানা রকম নেশার ঠেক বসে। পুলিশ এবং আবগারি দফতর মাঝেমধ্যে ধরপাকড় চালায়। কিন্তু সে সবই নাম কা ওয়াস্তে বলে অভিযোগ করেন শহরবাসীদের একাংশ। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া খোলা বাজারে এই ওষুধগুলি পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু সূত্রের খবর, ওষুধের দোকানের উপর বিশেষ নির্ভর করতে হয় না সাঁইথিয়ার নেশাড়ুদের। বিভিন্ন গুমটি এবং মুদিখানায় মদ গাঁজার পাশাপাশি লুকিয়ে চুরিয়ে বিক্রি হয় এই সমস্ত ওষুধও। আর তা নিয়েই পুলিশ এবং আবগারি দফতরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন শহরের বাসিন্দাদের একাংশ।

অবশ্য পুলিশের দাবি, নিয়মিত ধরপাকড়ের ফলে নেশার সামগ্রী বিক্রিতে ভাঁটা পড়েছে। বর্তমানে শহরে চোলাই মদ বিক্রির চল অনেক কমে এসেছে বলে দাবি করেন এক পুলিশ কর্তা। তবে, এত কিছুর পরেও নেশার প্রকোপ যে দিন দিন বেড়ে চলেছে তা মেনে নিয়েছে তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, জেলার দুবরাজপুর, সিউড়ি, লাভপুর, রামপুরহাট প্রভৃতি এলাকা থেকে মাদক আসে শহরে। এ ছাড়াও জংশন স্টেশন হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন পথ ঘুরে মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, নদীয়া জেলা এমনকী পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং আসাম থেকেও গাঁজা-সহ নানা পাচার হয়। জেলা আবগারি সুপারিনটেন্ডেন্ট তপনকুমার রায়ের দাবি, মাঠপলসা এলাকার কুমড়োতোড় গ্রামের চোলাই মদের ভাটি নষ্ট করে দেওয়া হয়। তা ছাড়াও মাস খানেক আগে চোলাই মদ বিক্রির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এক জনের জেল এবং জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন সিউড়ির সিজেএম। এ সবের ফলে শহরে মদের নেশা কিছুটা কমেছে বলে তপনবাবু দাবি করেন। তবে তিনি জানান, বর্তমানে আবগারি দফতরকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে একটি বিশেষ ড্রাগের নেশা। ড্রাগ কেনাবেচা এবং নেওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে তাঁরা ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে বলে জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন