প্রতীকী ছবি।
গোলাপে যে-নামে ডাকো, সে গোলাপই থাকে। কিন্তু ‘অ্যান্টি মাইন ভেহিক্ল’ যদি তার কাজ না-করে? তা হলে কি তাকে মাইন-সন্ধানী গাড়ি বা মাইন-বিধ্বংসী গাড়ি আদৌ বলা যায়?
প্রশ্নটা উঠছে ‘অ্যান্টি মাইন ভেহিক্ল’ নামে কেনা রাজ্যের দু’টি গাড়িকে ঘিরে। নামটা বেশ ওজনদার। কিন্তু মাইন খুঁজে বার করার প্রযুক্তিসমৃদ্ধ রাজ্যের দু’টি গাড়ি কার্যক্ষেত্রে একেবারে ব্যর্থ বলে জানাচ্ছ প্রশাসনিক সূত্র। কার্যত সেই কারণেই এ বারের লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে তাদের ব্যবহার করা যায়নি। পুলিশি সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলে থাকা একটি গাড়ি প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে, অন্যটি ব্যবহৃত হয় পুলিশকর্মীদের যাতায়াতের জন্য।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পর্বে বাংলা জর্জরিত ছিল মাওবাদী সমস্যায়। অশান্ত জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তে মাইন ফাটা অথবা তার খোঁজ পাওয়া যেত হামেশাই। ক্ষতি হত নিরাপত্তা বাহিনীর। তাই তৎকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, পথে পোঁতা মাইন খুঁজে বার করতে কেনা হবে অত্যাধুনিক অ্যান্টি মাইন ভেহিক্ল। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিদেশ থেকে সেই বিশেষ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দু’টি গাড়ি কেনে তৎকালীন সরকার। নির্দিষ্ট ভাবে বলতে না-পারলেও কর্তাদের একাংশের অনুমান, গাড়িগুলি কিনতে খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূল সরকার টের পায়, অ্যান্টি মাইন ভেহিক্ল দু’টি শুধু নামেই মাইন-সন্ধানী গাড়ি। মাইন খুঁজে বার করার কোনও ক্ষমতাই নেই তাদের! বহু ব্যয়ে এই ধরনের গাড়ি কেনা হল কেন, তা নিয়ে সরকারের সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে প্রবল ভাবে। কে, কেন, কী ভাবে, কোন চুক্তিতে এমন গাড়ি কেনার ছাড়পত্র দিয়েছেন, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয় প্রশাসনিক স্তরে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি প্রশাসনিক কর্তারা। এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্যই কাউকে দোষী প্রমাণিত করতে পারেনি বলে প্রশাসনের অন্দরের খবর। ফলে সব অনুসন্ধানে আপাতত থেমে গিয়েছে। আর সময় এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রয়োজন এবং ‘গুরুত্ব’ হারিয়েছে অ্যান্টি মাইন ভেহিক্ল।
প্রশাসনের শীর্ষ মহলের দাবি, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেই মাওবাদী সমস্যার সমাধান করেছে। জঙ্গলমহল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে মাওবাদী দৌরাত্ম্য। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মাওবাদী সমস্যাপ্রবণ এলাকাগুলির যে-তালিকা তৈরি করেছে, তা থেকেও বাদ পড়েছে এক সময়ে খবরের শিরোনামে থাকা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বীরভূম জেলার একাংশ। এখন শুধু ঝাড়গ্রাম জেলা খাতায়-কলমে থেকে গিয়েছে কেন্দ্রের ‘সিকিয়োরিটি রিলেটেড এক্সপেন্ডিচার’ বা এসআরই তালিকায়। ওই তালিকায় থাকা এলাকাগুলিতে সম্ভাব্য মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে অ্যান্টি মাইন ভেহিক্লের আর প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
এক কর্তা বলেন, “রাজ্যে যে-সব অ্যান্টি মাইন ভেহিক্ল ছিল, সেগুলির বাস্তবিক কার্যকারিতা আর নেই, এটা ঠিক। তবে এখন সেগুলির কোনও প্রয়োজনও নেই। তাই সেগুলি নিয়ে আপাতত কোনও পরিকল্পনা বা মাথাব্যথাও নেই সরকারের।”