দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরের সামনে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। (বাঁ দিক থেকে) শতাব্দী রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, দোলা সেন, মমতাবালা ঠাকুর। — নিজস্ব চিত্র।
সংবিধান এবং আইন মেনেই স্বচ্ছ ভাবে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ করা হয়। তৃণমূলকে সেই আইন মানতে হবে। তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে নির্বাচন কমিশন সে কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল বলে খবর। শুক্রবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। তাদের তরফে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয় কমিশনকে। তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের দাবি, সেই নিয়ে কোনও জবাব দিতে পারেনি কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে তৃণমূলকে জানানো হয়, আইন মেনেই কাজ হচ্ছে। তাতে সহযোগিতা করতেই হবে। ভুল তথ্য ছড়ানো থেকেও তৃণমূলকে বিরত থাকার পরামর্শ কমিশন দিয়েছে বলে খবর। বৈঠকের পরে সমাজমাধ্যমে কমিশনের দিকে আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
শুক্রবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে যান তৃণমূলের ১০ জন প্রতিনিধি। দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে সেখানে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। পাঁচটি প্রশ্নও কমিশনের কাছে রেখেছে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলির কোনও বক্তব্য, মতামত দেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো যাতে না হয়, তা দেখতে হবে। ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে তৃণমূলকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয় কমিশন।
কমিশন জানিয়েছে, বিএলও এবং ইআরও-দের অতিরিক্ত ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যকে জানানো হয়। কিন্তু নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কোনও টাকা এই ভাতার জন্য বরাদ্দ করা হয়নি। দেরি না করে দ্রুত যেন এই ভাতার টাকা দেওয়া হয়, তা জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
শুক্রবার কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে এসআইআর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, কমিশনের কর্তাদের সামনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নাম করে তৃণমূলের কয়েক জন সাংসদ এই বলে সরব হয়েছেন যে, তাঁর (জ্ঞানেশ) হাতে রক্ত লেগে আছে! সার্বিক ভাবে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাঙালিকে নিশানা করতেই এসআইআর করা হচ্ছে। তৃণমূলের তরফে এক, দুই, তিন করে মোট পাঁচটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রথমত, এসআইআর কি সত্যিই ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণের জন্য করা হচ্ছে, না কি বাংলা ও বাঙালিকে নিশানাই মূল উদ্দেশ্য? যদি তা না হয়, তা হলে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার জন্য অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজ়োরামে, অরুণাচলপ্রদেশের মতো বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত লাগোয়া রাজ্যগুলিতে কেন এই প্রক্রিয়া হচ্ছে না? শুধু বাংলাতেই কেন? দ্বিতীয়ত, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকায় যদি অবৈধ ভোটার থেকে থাকে, তা হলে সেই ভোটে নির্বাচিত সরকার কী করে ক্ষমতায় থাকতে পারে? তৃতীয়ত, বিহারে এসআইআর করে কত বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছে কমিশন? চতুর্থত, বিজেপি নেতারা অহরহ বলছেন, এসআইআরের পরে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে এক কোটির বেশি নাম বাদ যাবে। কী ভাবে তাঁরা এ কথা বলছেন? কমিশন কি তা হলে বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত সংস্থায় পরিণত হয়েছে? সর্বশেষ, মৃতদের নামের তালিকা দিয়ে দাবি তৃণমূল কমিশনের সামনে প্রশ্ন তুলেছে, এর দায় কার?
অভিষেক সমাজমাধ্যমে জানান, তৃণমূলের এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি কমিশন। তিনি লিখেছেন, ‘তৃণমূলের প্রতিনিধিদল আজ যে বিষয়গুলি তুলে ধরেছে, তার জবাব দিয়েছে বলে ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা দাবি করছে নির্বাচন কমিশন। এগুলি শুধু মানুষকে ভুলপথে চালনা করার জন্য নয়, এগুলি আসলে সর্বৈব মিথ্যা।’ তার পরেই অভিষেক জানিয়েছেন, কমিশনের কিছু গোপন করার না থাকলে শুক্রবারের বৈঠকের সিসিটিভি ফুটেজ এবং তাদের কাছে যে প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে, তা প্রকাশ করুক। তা যদি না করে, তবে কমিশনের ‘উদ্দেশ্য’ প্রশ্নের মুখে পড়ে। প্রসঙ্গত, এর আগেও তিনি কমিশনের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করা হোক বলে দাবি তুলেছিলেন।
অভিষেক নিজের পোস্টে আরও জানান, কিছু সময় নয়, বরং তৃণমূলের তোলা পাঁচ প্রশ্নের জবাব দিতে যত খুশি সময় নিক কমিশন। তাঁর কথায়, ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, বৈঠকের কিছু অংশ প্রকাশ করে আপনাদের প্রকৃত যে বক্তব্য ছিল, তা বিকৃত করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করার আগে দ্বিতীয় বার ভাবুন।’