শীত-বর্ষার চরিত্র নষ্ট দূষণের বাদামি মেঘে

মাঘ না যেতেই পাততাড়ি গোটাচ্ছে লেপ-কম্বল। আলমারিতে ওঠার জোগাড় সোয়েটার-মাফলার! দুপুর নাগাদ তো গরমে রীতিমতো হাসফাঁস করছেন অনেকে। এ বার শুধু নয়, কয়েক বছর ধরেই এমনটা ঘটছে। একটু ধরা দিয়েই পাকাপাকি ভাবে পালিয়ে যাচ্ছে শীত। এটা কি বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল?

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

মাঘ না যেতেই পাততাড়ি গোটাচ্ছে লেপ-কম্বল। আলমারিতে ওঠার জোগাড় সোয়েটার-মাফলার! দুপুর নাগাদ তো গরমে রীতিমতো হাসফাঁস করছেন অনেকে। এ বার শুধু নয়, কয়েক বছর ধরেই এমনটা ঘটছে। একটু ধরা দিয়েই পাকাপাকি ভাবে পালিয়ে যাচ্ছে শীত। এটা কি বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল? নাকি অন্য কিছুর সঙ্কেত? নাসা জানাচ্ছে, উষ্ণায়ন তো রয়েছেই, তার সঙ্গে জোট বেঁধেছে দূষণের ফাঁস। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, শীতের এই চরিত্র বদলের পিছনে আসলে দূষণের ‘বাদামি মেঘ’।

Advertisement

সাদা-কালো মেঘের দলে এই বাদামি মেঘটি কী?

মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে বসে এই রহস্যের জাল খোলার চেষ্টা করলেন নাসার বাঙালি বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায়। জানালেন, অতি সূক্ষ্ম ধুলো ও গ্যাসীয় কণার একটা স্তর বায়ুমণ্ডলের উপর দিয়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে মেঘের মতো ভেসে চলেছে। কোথাও তা আটকে গেলে সেখানেই বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার স্বাভাবিক আচরণ। আর্দ্রতা যেখানে বেশি, সেখানে ওই কালো ধোঁয়ার আস্তরণ জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে ঘনীভূত হচ্ছে। সহজে তা সরতে পারছে না। নাসার উপগ্রহ-চিত্রে এই বাদামি ধোঁয়ার আস্তরণ ধরা পড়েছে বলে গৌতমবাবুর দাবি।

Advertisement

আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সাধারণ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে তাপমাত্রা কম থাকে বলেই মাটি বা সাগরতল থেকে ওঠা জলীয় বাষ্প উপরে উঠে ঠান্ডায় ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টি ঝরায়। বাদামি মেঘে কার্বনের পরিমাণ বেশি বলে সূর্যের আলো শোষণ করে। তাতে ভূপৃষ্ঠে কম গরম পৌঁছোলেও বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে নীচ থেকে ওঠা জলীয় বাষ্প উপরে গিয়ে ঠান্ডা হতে পারছে না। বৃষ্টির মেঘ তৈরির প্রক্রিয়াটাই ব্যাহত হচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যে এলাকার উপরে বাদামি মেঘ যত বাড়বে, ততই বৃষ্টি কমবে। কারণ, এই মেঘ ছোট ছোট টুকরোয় তৈরি হয়। ফলে সহজে ঝরে পড়ে না। দিনের বেলা অনেকটা রোদ আটকে যায় এই বাদামি মেঘে। তাতে জলীয় বাষ্প কম তৈরি হয়। অথচ বৃষ্টির মেঘ তৈরি হতে গেলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়তে হবে। বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘বর্ষার উপরে এর প্রভাব অনেকটাই।’’

সাধারণত দূষণের প্রভাব কোনও নির্দিষ্ট এলাকাতেই স্থায়ী হয়। কিন্তু এই দূষণের প্রভাব বিশ্বজনীন বলেই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, এই দূষণের উৎস মূলত কয়লা-ডিজেল-পেট্রোলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, দাবানলের মতো ঘটনা। এতে কার্বন-মিশ্রিত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে উঠে বাদামি আস্তরণ তৈরি করে। গৌতমবাবু বলছেন, ‘‘বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে হাওয়ার বেগ বেশি থাকে। সেই হাওয়ায় ভেসে এরা এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ছড়িয়ে প়ড়ে।’’ অর্থাৎ কোনও এক দেশে দূষণ কমালেই যে দূষণের প্রভাব কাটানো যাবে, তেমনটা নয়। কোন দেশ থেকে এই বাদামি মেঘ কোন দেশে কী ভাবে কতটা ছড়িয়ে পড়ছে, তা বুঝতেই উপগ্রহ মারফত গোটা পৃথিবীর উপরে চোখ রাখছি আমরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন