ভাত চাই! ক্ষুব্ধ গ্রামে পোস্টার

জনশূন্য মোবারকপুরেও ক্ষোভের আঁচ। মাটির বাড়ির দেওয়াল থেকে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি সব পোস্টারে ছয়লাপ। সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা লেখা— ‘ভ্যানামেই (পোস্টারে লেখা ভেনামি) চাই না, ভাত চাই’।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

এমনই পোস্টারে ছেয়েছে এলাকা। —নিজস্ব চিত্র।

গোটা গ্রাম সুনসান। কথা বলার লোকই নেই। এমন জনশূন্য মোবারকপুরেও ক্ষোভের আঁচ। মাটির বাড়ির দেওয়াল থেকে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি সব পোস্টারে ছয়লাপ। সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা লেখা— ‘ভ্যানামেই (পোস্টারে লেখা ভেনামি) চাই না, ভাত চাই’।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের এই গ্রামেই শনিবার মিলেছে স্থানীয় তৃণমূল উপপ্রধান নান্টু প্রধানের দেহ। ঘটনায় বিজেপি-সিপিএমের দিকে তৃণমূল নেতৃত্ব আঙুল তুললেও, এলাকায় কিন্তু অন্য গল্প শোনা যাচ্ছে। অভিযোগ, জোর করে চাষজমিকে মাছের ভেড়িতে রূপান্তরিত করতেন নান্টু ও তাঁর দলবল। কেউ রাজি না হলে জুটত উত্তম-মধ্যম। কিন্তু ভ্যানামেই চিংড়ির চাষে জমি নষ্ট হয়। তাই অনেকেই বেঁকে বসেছিলেন। সেই সংঘাতেই নান্টুকে মরতে হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। মোবারকপুর লাগোয়া এক গ্রামের চাষিও রবিবার বললেন, ‘‘আমার ২৫ কাঠা জমিতে জোর করে নোনা জল ঢুকিয়ে দিয়েছিল। চাষ না করলে খাব কী?’’

এলাকায় কার্যত ‘সরকার’ নান্টুর সঙ্গে গ্রামবাসীর বিরোধ চলছিল বহু দিন ধরেই। জোর করে ভেড়ি তৈরি, পঞ্চায়েতে স্বজনপোষণ ছাড়াও গ্রামীণ মেলা, কালীপুজোর নামে চাঁদার জুলুমেও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন এলাকাবাসী। মোবারকপুরের কয়েকজন নান্টু ঘনিষ্ঠ সম্প্রতি শিবির বদলান। আর তারপরই শুরু হয় প্রতিরোধ। জমি বাঁচাতে গড়ে ওঠে ‘ভগবানপুর ১ ব্লক সংগ্রাম কমিটি’।

Advertisement

আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামের ছায়া সঙ্কেত দিচ্ছে শাসককে

স্থানীয় সূত্রের খবর, নান্টু ঘনিষ্ঠ মলিন সাউকে সামনে রেখেই ভেড়ির কারবার চলত। চাষজমি ছাড়তে নারাজ মোবারকপুরের বাসিন্দাদের শুক্রবার প্রথমে মলিনই হুমকি দেন। পাল্টা মারও খান। শনিবার সকালে এর বিহিত করতে দলবল নিয়ে মোবারকপুরে যান নান্টু। ঘটনায় জখম নান্টুর দুই সঙ্গী জয়দেব শিট এবং বাপি মান্না তমলুক হাসপাতালে ভর্তি। জয়দেব বলেন, ‘‘নান্টু কয়েক জনকে মারধর করতেই খেপে যান বাসিন্দারা। মহিলারা শাঁখ বাজালে লোক জড়ো হয়। নান্টু ছুটছিল। পায়ে তির লেগে পড়ে গেলে ওকে কোপানো হয়।’’

মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য এ দিনও বিজেপি-সিপিএমকে বিঁধে বলেছেন, ‘‘নান্টুকে যারা মেরেছে তারা কাপুরুষ। তাই গ্রাম ছেড়েছে।’’ নান্টুর ভাই, তৃণমূল নেতা পিন্টুরও বক্তব্য, ‘‘সালিশির জন্য ডেকে দাদাকে খুন করেছে ওরা।’’ ৭২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সাত জনকে ৬ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন