ভেঙ্কটেশের আর্জি খারিজ বন্দরের

জবরদখল করে রাখা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস সময় চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আইনজীবী মারফৎ চিঠি পাঠিয়েছিল শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ পাল্টা চি‌ঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, শ্রীকান্ত মোহতার সংস্থা তাঁদের চোখে জবরদখলকারী। তাদের কোনও রকম সময় দিতে তাঁরা নারাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৩
Share:

জবরদখল করে রাখা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস সময় চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আইনজীবী মারফৎ চিঠি পাঠিয়েছিল শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ পাল্টা চি‌ঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, শ্রীকান্ত মোহতার সংস্থা তাঁদের চোখে জবরদখলকারী। তাদের কোনও রকম সময় দিতে তাঁরা নারাজ।

Advertisement

বন্দরের এস্টেট ম্যানেজার শুভ্রকমল ধর শুক্রবার শুধু ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের আইনজীবীকে চিঠি পাঠিয়েই ক্ষান্ত হননি, তারাতলা থানাতেও চিঠি পাঠিয়ে পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনশনের জমি থেকে জবরদখলকারী উচ্ছেদ করার জন্য পুলিশি সাহায্য চেয়েছে। পুলিশ কবে, কোন সময়ে বাহিনী দিয়ে তাঁদের সাহায্য করতে পারবে, ওই চিঠিতে তা জানানোর অনুরোধ করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত রবিবার হাইড রোডের জমি দখল-পুনর্দখলের পরে বৃহস্পতিবার ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের আইনজীবী সঞ্জয় বসু বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বলেন, এলএমজে কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে তাঁর মক্কেল সরল বিশ্বাসে ওই জমি ভাড়া নিয়েছিল। দু’দফায় ৫০ হাজার বর্গফুট এবং ১৯ হাজার বর্গফুট জমি ভাড়া নেওয়া হয়। ভেঙ্কটেশের আইনজীবীর দাবি, এলএমজে-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, ওই জমি ভাড়া দেওয়ার আইনি অধিকার তাদের আছে। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরে এলএমজে-র মিথ্যাচার তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় হাইড রোডের জমি ছেড়ে দিতে আগ্রহী জানিয়ে ভেঙ্কটেশের তরফে বলা হয়, ১৯ হাজার বর্গফুট জমি তারা ১৫ দিনের মধ্যেই ছেড়ে দেবে। বাকি ৫০ হাজার বর্গফুট জমিতে যে হেতু অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে, তাই সেগুলি সরানোর জন্য তিন মাস সময় প্রয়োজন। সেই আবেদনই এ দিন খারিজ করে দিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভেঙ্কটেশের আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘বন্দরের চিঠি পেয়েছি। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে আমরা তিন মাস সময় চেয়ে ওই একই আবেদন জানাব।’’

Advertisement

তিন মাস বন্দরের জমি ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় ভাড়া দিতেও তারা রাজি বলে ভেঙ্কটেশের চিঠিতে জানানো হয়েছিল। সঞ্জয়বাবু এ দিন বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বা এলএমজে— হাইকোর্ট যাকে বলবে, তাকেই ভাড়া মিটিয়ে দেবে ভেঙ্কটেশ।

আদালতে ভেঙ্কটেশের আর্জির কী মীমাংসা হবে সেটা পরের কথা, বন্দর কর্তৃপক্ষ আপাতত ওই প্রযোজক সংস্থার প্রতি কড়া অবস্থান নিয়েই চলেছেন। গত রবিবারের ঘটনার পরে ভেঙ্কটেশকে তাদের আওতাধীন কোনও এলাকায় শ্যুটিং করতে না দেওয়ার কথা জানিয়েছিল বন্দর। পাশাপাশি হাইড রোডের জমিতে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ কাটার কথা বলে চিঠি দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভা এবং সিইএসসি-কে। শুক্রবার বন্দর কর্তৃপক্ষের কানে আসে ব্রেস ব্রিজের নীচে তাঁদের লিজ দেওয়া জমিতে ভেঙ্কটেশকে শ্যুটিং করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ওই জমিতে থাকা জলাশয়ে মাছ চাষ করে মৎস্যজীবীদের একটি সমবায়। তারাই ভেঙ্কটেশকে শ্যুটিংয়ের অনুমতি দিচ্ছিল বলে খবর। তৎক্ষণাৎ তাদের ডেকে মৌখিক ভাবে বলে দেওয়া হয় যে, এমন অনুমতি দেওয়ার আইনি অধিকার সমবায়ের নেই। ফলে ভেঙ্কটেশ রণংদেহী মূর্তি ছেড়ে নরম হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ যে নরম হতে নারাজ, সেটা স্পষ্ট।

কিন্তু গত রবিবার নিজেদের বাহিনী নিয়ে জমি দখল করেও দুষ্কৃতীদের দাপটে ফের তা খোয়ানো বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বার কি সাহায্য করবে কলকাতা পুলিশ? সে দিন তারা বন্দরের লোকজনকে সাহায্য করতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। অনেকের মতে, ভেঙ্কটেশের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলেই হাত গুটিয়ে ছিল পুলিশ। লালবাজারের কর্তারা তারাতলা থানাকে দেওয়া বন্দরের চিঠি সম্পর্কে এ দিন সরাসরি মুখ খুলতে চাননি লালবাজারের কোনও কর্তাই। নাম না-ছাপার শর্তে এক কর্তা বলেন, ‘‘আদালতে মামলা চলছে। তাই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন