নির্মল-বিজ্ঞাপনে বিড়ম্বনায় মুর্শিদাবাদ

বেলডাঙার এক মহিলার কথায়, ‘‘ক’দিন পরেই পাত্রপক্ষ মেয়ে দেখতে আসবে। ভাবছি ওই দিনটার জন্য বাড়ির সামনের ওই পোস্টার কিছু দিয়ে ঢেকে দেব। ওদের চোখে এমন বিজ্ঞাপন পড়লে ওঁরা কী ভাববেন, বলুন তো!’’

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বহরমপুর ও বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০০
Share:

সেই ফ্লেক্স। বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

টিভিতে ‘হাগ ডে’ শুনে মুখে আঁচল চাপা দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের এক বৃদ্ধা। তার পরে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘কী দিনকাল পড়ল রে বাবা! এখনকার ছেলেমেয়েদের লজ্জা-শরম বলে কিছু নেই নাকি!’’

Advertisement

বহু কষ্টে ওই বৃদ্ধাকে তাঁর সঙ্গীরা বুঝিয়েছিলেন, ‘‘এই হাগের অন্য মানে গো ঠাকুমা। হাগ মানে জড়িয়ে ধরা।’’ ঠাকুমার ছোট্ট প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘মরণ!’’

সেই মুর্শিদাবাদেরই জেলা প্রশাসন নবাবভূমিকে নির্মল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিষয়টি অবশ্য ‘হাগ’-এ শেষ নয়। একটা আ-কারও রয়েছে। আর বিড়ম্বনার শুরু সেখানেই!

Advertisement

শৌচাগার ছাড়া যাতে অন্য কোথাও কেউ ইয়ে না করে সেই জন্য সাতসকালে মাঠেঘাটে ছুটছেন বিডিও, ওসি। তৈরি হয়েছে ছোট ছোট দল। মাঠে একটু আড়াল খুঁজে কেউ হয়তো সবে বসেছেন। অমনি সেই দলের ছেলেরা বাজিয়ে দিল হুইসেল!

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এত কিছু করেও মাঠপ্রিয় লোকজনের স্বভাব বদলানো যাচ্ছিল না। বাড়িতে শৌচাগার আছে। তবুও তিনি সেখানে যাবেন না।’’

তা হলে?

প্রশাসনের তরফে ঠিক হল, প্রত্যন্ত গ্রামের লোকজনের সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়ে তাঁদের ভাষাতেই সচেতন করতে হবে। তৈরি হল ফ্লেক্স, ফেস্টুন, লিফলেট। গ্রামে গ্রামে টাঙিয়ে দেওয়া হল সেই সব সতর্কবার্তা।

পরিষ্কার বাংলায় লিখে দেওয়া হল— খোলা জায়গায় ইয়ে করলে ১০০০ টাকা জরিমানা!

মাড্ডার এক যুবক বলছেন, ‘‘প্রশাসন তো এক দূষণ বন্ধ করতে গিয়ে এখন দৃশ্যদূষণ বাড়াচ্ছে।’’ বেলডাঙার এক মহিলার কথায়, ‘‘ক’দিন পরেই পাত্রপক্ষ মেয়ে দেখতে আসবে। ভাবছি ওই দিনটার জন্য বাড়ির সামনের ওই পোস্টার কিছু দিয়ে ঢেকে দেব। ওদের চোখে এমন বিজ্ঞাপন পড়লে ওঁরা কী ভাববেন, বলুন তো!’’

বহরপুরের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক সুগত সেন বলছেন, “আরও অনেক ভাবে বিষয়টি বোঝানো যেত। এমন ভাষা প্রশাসন না ব্যবহার করলেই ভাল হত।’’

বেলডাঙা ১ বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল বলছেন, ‘‘নানা ভাবে সচেতন করেও মানুষকে পুরনো অভ্যাস থেকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই ওই ভাষা ও ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে।’’

তবে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘বিডিওদের বলব, এমন ভাষা ব্যবহার না করতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন