ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড
ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে কোনও ফাঁক রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা শুরু করল কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক।
পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের কর্তাদের দাবি, প্রকল্পের জন্য ১৩.৪৪ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোথাও কোনও খামতি ছিল না। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের (একরপ্রতি ৩০ লক্ষ) চেয়ে ওখানে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দাম (প্রায় ১ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা) দেওয়া হয়েছে জমি-মালিকদের। এ জন্য খরচ হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। এক-একটি টাওয়ার বসানোর জন্য জমি-মালিকদের প্রায় চার লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও গ্রিড সংলগ্ন খামারআইট এবং মাছিভাঙা গ্রামের রাস্তা সংস্কারের জন্য আরও ৮৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।
নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ার মুখে, গত ১৭ জানুয়ারি ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিরোধিতায় অগ্নিগর্ভ হয়েছিল ভাঙড়। গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল দু’জনের। প্রশাসনের নির্দেশে তার পর থেকে বন্ধ পড়ে রয়েছে প্রকল্পের কাজ। আন্দোলনকারীরা প্রকল্পের বিরোধিতায় স্বাস্থ্যহানি ছাড়াও নিয়ম না-মেনে জোর করে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগও তুলেছিলেন। জমির দাম জমি-মালিকেরা হাতে পাননি, এমন অভিযোগও উঠেছিল। যদিও এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে কোনও জমি-মালিকই অভিযোগ দায়ের করেননি বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। অবশ্য সেই সময় জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মেনে নিয়েছিলেন, ঘুরপথে সেই টাকা ভাঙড়ের দলীয় নেতা আরাবুল ইসলাম ও তাঁর দলবল আত্মসাৎ করেছিল।
আরও পড়ুন: হুঁশ ফেরাচ্ছে প্রবীণার চিঠি
এই পরিস্থিতিতেই অধিগ্রহণের যাবতীয় প্রক্রিয়া নিয়ে নিশ্চিত হতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘অধিগ্রহণে কোনও ফাঁক রয়েছে কিনা, তা প্রাথমিক ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হবে।’’ গ্রিডের এক কর্তা বলেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণে ফাঁক ছিল না। অধিগ্রহণের পর বছর দুয়েক কোনও সমস্যা হয়নি। ওখানকার বর্তমান পরিস্থিতির রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফেও অধিগ্রহণের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে জানিয়ে বিদায়ী জেলাশাসক পি বি সেলিম বলেন, ‘‘কাগজ খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, ওখানকার প্রত্যেক জমি-মালিকের নামেই চেক বিলি হয়েছে। জোর করে জমি দখলের বিষয়টি অমূলক।’’
বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণে কেন্দ্রীয় ওই প্রকল্পে ভাঙড়ের টোনা মৌজায় ৪০০/২০০ কেভির দু’টি সাব-স্টেশন এবং ২৮টি টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা হয়। সাব-স্টেশন দু’টির জন্য ২০১১ সালে ১৩.৪৪ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৪ সালেই সাব-স্টেশন এবং টাওয়ারের জমি-মালিকদের টাকা চেকের মাধ্যমে বিডিও-র উপস্থিতিতে ব্লক অফিস থেকে মেটানো হয় বলে গ্রিড কর্তৃপক্ষের দাবি। একটি সাব-স্টেশন চালু হয়েছে। আর একটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। ২৮টির মধ্যে ২৪টি টাওয়ার বসানোর কাজও শেষ। জুড়ে দেওয়া হয়েছে তার। এর পরেই ধাক্কা। প্রকল্প হলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা যে ভিত্তিহীন, সেই দাবি ইতিমধ্যেই নানা ভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন গ্রিড কর্তারা। আর অধিগ্রহণের প্রশ্নে তাঁদের দাবি, জমি-মালিকেরা কোনও ভাবে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না-হন সে ব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।