প্রেসিডেন্সিতে

টাকা দিই তাই শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করব, এটা অবান্তর: পার্থকে কটাক্ষ বর্ধনের

তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুর পরে অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন। শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা নীতি— সব কিছুরই তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রণববাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩
Share:

প্রণব বর্ধন

তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুর পরে অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন। শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা নীতি— সব কিছুরই তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রণববাবু।

Advertisement

প্রেসিডেন্সির ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ওই অর্থনীতিবিদ কটাক্ষ করেন শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গিকেও। ‘‘এই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা টাকা দিই। তাই (শিক্ষা) নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এ একেবারে অবান্তর কথা,’’ বলেন বর্ধন। এ দিনের অনুষ্ঠানে আলোচ্য ছিল ‘উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ’।

বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও সমালোচনা করেন বর্ধন। বলেন, ‘‘এই ভাবে উচ্চশিক্ষার প্রসার হয় না। এতে শুধু সংখ্যাই বাড়ে।’’ প্রস্তাবিত শিক্ষা বিলের কথা তুলে বর্ধনের অভিযোগ, এই ধরনের বিলের মাধ্যমে সরকার আরও বেশি করে উচ্চশিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। আদর্শ উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা কী হতে পারে, সেই বিষয়েও নিজের অভিমত জানিয়ে দিয়েছেন প্রণববাবু।

Advertisement

ওই অর্থনীতিবিদের মন্তব্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে লাগাতার বিতর্কে পৃথক মাত্রা জুড়ল বলে মনে করছে শিক্ষা শিবিরের বড় অংশ। কয়েক দিন আগেই প্রেসিডেন্সির ২০০ বছর পূর্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উচ্চশিক্ষায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেছিলেন প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু। তাঁর বক্তব্য ছিল, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকুক, কিন্তু তারা শিক্ষাকে মোটেই নিয়ন্ত্রণ করবে না। শিক্ষার দায়িত্ব থাক শিক্ষাবিদদের হাতেই। শিক্ষাজগতের অনেকে মনে করছেন, শাসক দলের সাংসদ সুগতবাবুর সুরকেই জোরদার করল অর্থনীতিবিদ বর্ধনের মন্তব্য।

মূল আলোচ্যের রেশ টেনে প্রণববাবু সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘‘রাজনীতিকে না-সরালে এ দেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’’ প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ব-মানে টেনে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর শিক্ষার উন্নয়নে বর্ধনের দাওয়াই, রাজনৈতিক ডামাডোল থেকে উচ্চশিক্ষাকে সরিয়ে আনতেই হবে। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ভারতের মতো দেশে কেন্দ্র বা রাজ্যে যখন যে-দল ক্ষমতায় থাকে, তারাই উচ্চশিক্ষাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। এই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপই ‘ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অভিশাপ’ বলে মনে করেন বর্ধন। তাঁর অভিযোগ, উপাচার্য থেকে অধস্তন কর্মী— বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হচ্ছে। তিনি যেখানে অধ্যাপনা করেন, আমেরিকার সেই বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে প্রণববাবু বলেন, ‘‘বার্কলের মতো পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে যদি কোনও সরকারি হস্তক্ষেপ হয়, কেউ তা মেনে নেবে না। প্রতিবাদ হবেই।’’

শুধু রাজ্য নয়, শিক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপেরও নিন্দা করেন বর্ধন। তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর মাধ্যমে কেন্দ্র উচ্চশিক্ষাকে নানা ভাবে নিয়ন্ত্রণ
করে চলেছে।

এ দিন যে-প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিবিদ বর্ধন শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করলেন, সেই প্রেসিডেন্সির কর্তৃপক্ষ কী বলছেন?

অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। প্রণববাবুর বক্তব্য পুরোপুরি সমর্থন করেননি তিনি। বর্ধনের বক্তব্য শেষ হতেই দর্শকাসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অনুরাধাদেবী জানান, শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সর্বত্র রয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। প্রণববাবু শিক্ষার যে-মডেলের কথা বলছেন, তারও বিরোধিতা করেন তিনি।

পরে উপাচার্য বলেন, ‘‘স্বাধিকার বলতে আমি বুঝি নিয়োগের স্বাধিকার, পাঠ্যক্রম তৈরির স্বাধিকার, ছাত্র ভর্তিতে স্বাধিকার। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে টাকা নিলে তো তার হিসেব দিতেই হবে আমাদের। সেই দায়বদ্ধতা অস্বীকার করা যায় না।’’ তাঁর বক্তব্য, অন্য কোথায় কী হচ্ছে, তিনি তা বলতে পারবেন না। তবে সরকার তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা তিনি মনে করেন না।

প্রণববাবুর বক্তব্য শুনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য পুরনো অবস্থানেই অনড় থেকেছেন এবং টেনে এনেছেন অনুরাধাদেবীর নাম। তিনি বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আমরা করি না। তবে শিক্ষাঙ্গনের শৃঙ্খলা নষ্ট হলে কি কিছুই বলব না!’’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হলে অনুরাধা লোহিয়া প্রেসিডেন্সির উপাচার্য হতে পারতেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন