Priyanka Gandhi Vadra

Priyanka Gandhi Vadra: গাঁধীদের আস্থাভাজন যোগ দিতে পারেন তৃণমূলে, প্রিয়ঙ্কার গড়েও এ বার নজর পিকে-র

গোয়ায় লুইজিনহো ফেলেরো-সহ একাধিক কংগ্রেস নেতা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের হাত ধরেই গোয়ায় তৃণমূল মাঠে নেমেছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৬
Share:

কংগ্রেস হাই কমান্ডের কাছে খবর এসেছে, তৃণমূল উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের নেতাদের দলে টানতে চেষ্টা করছে। ফাইল চিত্র।

গোয়ার পরে এ বার খোদ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার গড়ে প্রশান্ত কিশোরকে ঘিরে কংগ্রেস শিবিরে দুশ্চিন্তা। কারণ, এত দিন প্রিয়ঙ্কার আস্থাভাজন বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের নেতা ললিতেশপতি ত্রিপাঠী তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন। এবং এখানেও কংগ্রেস নেতারা ভোটকুশলী পি কে-র হাত দেখতে পাচ্ছেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নিয়ে রাহুল প্রিয়ঙ্কার সঙ্গেই পি কে-র বৈঠক হয়েছিল। লখিমপুর খেরিতে প্রিয়ঙ্কার সক্রিয়তার পরে কিশোর বলেছিলেন, এ সব করে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

গোয়া, ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙন ধরানোর পরে কংগ্রেস হাইকমান্ড সবে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করছিল। গোয়াতে দুই বিক্ষুব্ধ নেতাকে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। ত্রিপুরায় নতুন প্রদেশ সভাপতি নিয়োগ করে পাঁচ জনকে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। এরই মধ্যে কংগ্রেস হাই কমান্ডের কাছে খবর এসেছে, তৃণমূল উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের নেতাদের দলে টানতে চেষ্টা করছে।

Advertisement

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, ললিতেশ সত্যিই তৃণমূলে যোগ দিলে তা গাঁধী পরিবারের জন্য অস্বস্তির বিষয় হয়ে উঠবে। কারণ, ললিতেশ উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী কমলাপতি ত্রিপাঠীর প্রপৌত্র। পূর্ব উত্তরপ্রদেশে ললিতেশ কংগ্রেসের অন্যতম ব্রাহ্মণ মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দিন কুড়ি আগে তিনি কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এখনও কিছু চূড়ান্ত না হলেও তৃণমূল শিবিরের খবর, ললিতেশকে শীর্ষ নেতৃত্ব যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। কংগ্রেস নেতারা এত দিন জানতেন, ললিতেশ সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেবেন। কিন্তু এখন তাঁরা জানতে পারছেন, ললিতেশের সঙ্গে পি কে-র মাধ্যমে তৃণমূল নেতৃত্বের যোগাযোগ হয়েছে। তাঁকে উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি করে দেওয়া হতে পারে। তাতে তৃণমূলের বিরাট লাভ হবে এমন নয়। কিন্তু কংগ্রেস অস্বস্তিতে পড়বে।

গোয়ায় কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেরো-সহ একাধিক কংগ্রেস নেতা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের হাত ধরেই গোয়ায় তৃণমূল মাঠে নেমেছে। ফেলেরো নিজেই স্বীকার করেছিলেন, কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য পি কে-ই তাঁকে প্রস্তাব দেন। ২০১৭-য় গোয়ায় নির্বাচনের পরে কংগ্রেস গোয়ায় সরকার গড়ার জায়গায় ছিল। সেখান থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা কমতে কমতে এখন চারে এসে ঠেকেছে। এরই মধ্যে জল্পনা শুরু হয়, কর্টোরিমের বিধায়ক অ্যালেক্সো রেজিনাল্ডো লৌরেন্সো আম আদমি পার্টিতে যোগ দিতে চলেছেন। আতঙ্কের ঠেলায় রবিবার রাতে তড়িঘড়ি তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করা হয়। অগস্টে আর এক বিধায়ক অ্যালেক্সো সেকুরাকে কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছিল। কংগ্রেস সূত্রের খবর, দুই অ্যালেক্সোই প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে গিরিশ চোডণকরকে সরানোর দাবিতে সরব ছিলেন। তাই তাঁদের কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে।

এর আগে ত্রিপুরায় একাধিক কংগ্রেস নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শিলচরে সুস্মিতা দেব কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসার পরে তাঁকেও ত্রিপুরায় কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। তারই মধ্যে কার্যনির্বাহী সভাপতি পীযূষ কান্তি বিশ্বাস পদত্যাগ করায় তিনিও তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। পরিস্থিতি সামলাতে বীরজিৎ সিনহাকে নতুন প্রদেশ সভাপতি নিয়োগ করে আরও পাঁচ জনকে কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করা হয়। গোয়া-ত্রিপুরায় ক্ষত মেরামত করতে না করতেই, উত্তরপ্রদেশে ললিতেশের খবর এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বার বারই অভিযোগ তুলছেন, যেখানেই বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই, সেখানেই তৃণমূল বিজেপির ‘সুপারি নিয়ে’ কংগ্রেসের দল ভাঙাতে নেমে পড়ছে। দলীয় সূত্রের খবর, শনিবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও অধীর বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলকেই আসল কংগ্রেস বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। কংগ্রেসের ক্ষতি করছেন। এ বার উত্তরপ্রদেশে ললিতেশের সঙ্গে তৃণমূল যোগাযোগ করাতে কংগ্রেস নেতারা একই প্রবণতা দেখছেন।

ললিতেশ ২০১২-তে কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১৯-এ লোকসভায় প্রার্থী হলেও তিনি হেরে যান। প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরে প্রিয়ঙ্কাকে প্রথমে এআইসিসি-তে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই তিনি রাজ্যে ‘টিম প্রিয়ঙ্কা’-র সদস্য বলে পরিচিত। কমলাপতির ছেলে লোকপতি, লোকপতির ছেলে রাজেশপতি সকলেই কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। রাজেশপতির ছেলে ললিতেশ সেই হিসেবে কংগ্রেসের চতুর্থ প্রজন্মের নেতা ছিলেন। দলে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না এবং প্রবীণ নেতারা সম্মান পাচ্ছেন না, এই অভিযোগ তুলে তিনি দল ও সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন। ললিতেশের আগে সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে জিতিন প্রসাদ ও অনু টন্ডন কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। জিতিন গিয়েছেন বিজেপিতে, অনু এসপি-তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন