Murder

তাঁরই চেপে ধরা শাড়ির ফাঁসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন স্বামী প্রতুল, জেরায় স্বীকার অদিতির

বৃহস্পতিবার রাতে এয়ারপোর্ট থেকেই আটক করা হয় অদিতিকে। তদন্তকারীরা জানান, জেরা শুরু হতেই অদিতি খুনের কথা স্বীকার করে নেন। কী কারণে খুন হতে হল প্রতুলকে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:২৪
Share:

পুলিশি জেরায় খুনের কথা স্বীকার করলেন অদিতি। —নিজস্ব চিত্র।

দিনের পর দিন অত্যাচারের মাত্রা বাড়ছিল। স্বামীর বেহিসাবি জীবনযাত্রা সামলাতে গিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছিলেন স্ত্রী। কিন্তু তার পরেও স্বামীর টাকার দাবি বেড়েই চলেছিল। তদন্তকারীদের দাবি, সেই আক্রোশ থেকেই প্রতুল চক্রবর্তীকে খুন করেছেন এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পদস্থ কর্মী অদিতি চক্রবর্তী।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির ভাড়াবাড়িতে খুন হওয়া প্রতুল চক্রবর্তীর খুনের রহস্য কিনারা করতে গিয়ে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে এয়ারপোর্ট থেকেই আটক করা হয় তাঁর স্ত্রী অদিতি চক্রবর্তীকে। তদন্তকারীরা জানান, জেরা শুরু হতেই অদিতি খুনের কথা স্বীকার করে নেন। জানান, তিনিই স্বামী প্রতুলকে গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন। তার পর সারা রাত তাঁর দেহের পাশেই শুয়ে ছিলেন। পরে ভোরবেলা নিজের বাড়ি ঘুরে অফিস পৌঁছন।

খুনের কারণ হিসাবে তিনি লম্বা কাহিনি বলেন। তদন্তকারীদের অদিতি জানিয়েছেন, তাঁর প্রথম স্বামী এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়াতে চাকরি করতেন। আকস্মিক অসুস্থতায় তাঁর মৃত্যু হলে অদিতি সেই চাকরি পান।

Advertisement

প্রায় ১০ বছর আগে প্রতুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। প্রতুল তখন গুরুগ্রামের একটি নামী প্রসাধন কোম্পানির বিপননের উঁচু পদে কর্মরত। তিনি তখন পূর্ব ভারতের দায়িত্বে। তাই নিয়মিত কলকাতায় আসতেন প্রতুল। সেই সূত্রেই আলাপ অদিতির সঙ্গে। কিছুদিনের মধ্যে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। অদিতির আগের স্বামীর ছেলের বয়স এখন ১৫। প্রতুলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তাঁদের একটি মেয়ে হয়। তার বয়স এখন ৯ বছর।

(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)

আরও পড়ুন: খুন করে স্বামীর দেহের পাশেই রাত কাটালেন, সকাল হতেই অফিস গেলেন স্ত্রী

তদন্তকারীদের কাছে অদিতি দাবি করেছেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রতুলের কোম্পানির অবস্থা ভাল চলছিল না। প্রতুলের আয় কমতে থাকে। কিন্তু বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় কোনও খামতি রাখতেন না প্রতুল। ফলে, পকেটে টান পড়ার পর থেকেই অদিতির কাছে টাকা চাইতে শুরু করেন তিনি। তদন্তকারীদের কাছে অদিতি অভিযোগ করেন, তাঁর অনেক গয়নাও প্রতুল বন্ধক রেখে দেন। ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রচুর ঋণ করতে থাকেন। কিন্তু সমস্ত জায়গাতেই তিনি ব্যবহার করতেন অদিতির কাশীপুরের ঠিকানা।গ্যারান্টর করতেন অদিতিকে। কাজেই ক্রমাগত ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছিলেন অদিতি।

জেরায় অদিতি পুলিশকে জানিয়েছেন, চলতি বছরের মার্চে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান। এবং সেই বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছেও বলে দাবি করেন অদিতি। কিন্তু তার পরেও নানা অছিলায় টাকা চাইতেন প্রতুল। টাকা না দিলে ছেলেমেয়ের স্কুলের সামনে গিয়েও গন্ডগোল পাকাতেন তিনি। সম্প্রতি মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন প্রতুল। এই নিয়ে বিবাদ আরও বাড়ে। তার মধ্যেই প্রতুল কয়েক দিন আগে অদিতিকে জানান, তিনি কোম্পানি থেকে একটা বড় অঙ্কের বকেয়া টাকা পাবেন। সেটা পেয়ে গেলেই অদিতির টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন। সেই বিষয়ে কথা বলতে বাগুইআটির একটি হোটেলে অদিতিকে ডেকে পাঠান প্রতুল। তাঁর সঙ্গে সেখানে দেখাও করেন অদিতি।

আরও পড়ুন: পানিহাটির বাড়ি থেকে উদ্ধার প্রৌঢ়ের দেহ

এর পর টাকা দেওয়ার জন্য বুধবার রাতে পানিহাটির ভাড়াবাড়িতে অদিতিকে ডাকেন প্রতুল। অদিতি পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই রাতে টাকা দেওয়ার বদলে উল্টে প্রতুল মেয়েকে অপহরণ করার হুমকি দিতে থাকে। সেই অবস্থায় হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় প্রতুলের সঙ্গে তাঁর। অদিতি দাবি করেছেন, প্রতুল তাঁকে শাড়ির ফাঁস দিয়ে মারতে গিয়েছিলেন। তখন নিজেকে বাঁচাতে পাল্টা আক্রমণ করেন অদিতি।

পুলিশের কাছে তাঁর দাবি, প্রতুল মত্ত ছিলেন। তাই বাধা দিতে পারেননি বেশি। অদিতির চেপে ধরা শাড়ির ফাঁসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন ময়নাতদন্তে প্রতুলের পাকস্তলী থেকে প্রচুর মদ পাওয়া গিয়েছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি জোন (২) আনন্দ রায়বলেন, “আমরা অভিযুক্তের বয়ান খতিয়ে দেখছি।” তবে তদন্তকারীদের দাবি, অদিতির বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনার অনেকটাই মিল আছে।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরপেতে চোখ রাখুন আমাদেররাজ্যবিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন