Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal news

খুন করে স্বামীর দেহের পাশেই রাত কাটালেন, সকাল হতেই অফিস গেলেন স্ত্রী

পানিহাটিতে ৫২ বছরের প্রৌঢ় প্রতুল চক্রবর্তীর খুনের রহস্যের কিনারা করতে গিয়ে এই তথ্য তাজ্জব করে দিয়েছে পুলিশ কর্তাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয় প্রতুলের।

ধৃত অদিতি চক্রবর্তী। রাতভর পুলিশের জেরায় স্বামী প্রতুল চক্রবর্তীকে খুনের কথা স্বীকার করেন তিনি।— নিজস্ব চিত্র।

ধৃত অদিতি চক্রবর্তী। রাতভর পুলিশের জেরায় স্বামী প্রতুল চক্রবর্তীকে খুনের কথা স্বীকার করেন তিনি।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৩৩
Share: Save:

গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে প্রাক্তন স্বামীকে ভাড়াবাড়ির ঘরে খুন করে মৃতদেহের সঙ্গে রাত কাটালেন বছর চল্লিশের এক মহিলা। ভোরের আলো ফুটতেই চুপচাপ দরজা ভেজিয়ে তিনি সোজা চলে গেলেন নিজের বাড়িতে। এর পর স্নান-খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের কর্মক্ষেত্র এয়ারপোর্টে চলে গেলেন। সারা দিন সেখানে কাজও করলেন। ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পেলেন না যে, কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি নিজের স্বামীকে খুন করে এসেছেন!

উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে ৫২ বছরের প্রৌঢ় প্রতুল চক্রবর্তীর খুনের রহস্যের কিনারা করতে গিয়ে এই তথ্য তাজ্জব করে দিয়েছে পুলিশ কর্তাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয় প্রতুলের। মাত্র চার দিন আগেই পানিহাটি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগর এলাকায় শ্যামল মজুমদারের বাড়ির দোতলায় ঘর ভাড়া নেন প্রতুল। নিজেকে তিনি গুরুগ্রামের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। বাড়ি মালিককে জানিয়েছিলেন, একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থায় উঁচু পদে কাজ করেন তিনি । সোদপুরে ওই সংস্থার একটি শাখা অফিস খোলা হবে। তাই কিছু দিন পানিহাটিতেই থাকবেন।

বাড়ির মালিক শ্যামল মজুমদার শুক্রবার বলেন, “একাই থাকতেন ওই ব্যক্তি। হোম ডেলিভারিতে খাবার আসত।” বৃহস্পতিবার খাবার দিতে এসেছিল ডেলিভারি বয়। বার বার ডাকার পর প্রতুলের কোনও উত্তর না পাওয়ায় তিনি শ্যামলবাবুকে ডাকেন। এর পর তাঁরা ভেজানো দরজা ঠেলে ঢুকে দেখেন, প্রতুলের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে বিছানায়। গলায় শাড়ির ফাঁস।

আরও পড়ুন: ‘ফেসবুক প্রেম নয়!’ এই পরামর্শই দিচ্ছেন বাস্তবের ‘বীর’ মুম্বইয়ের হামিদ

তদন্তে নেমে প্রথমেই পুলিশ আটক করে শ্যামলকে। জানা যায় অমিতাভ রায়চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে শ্যামলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতুলের। কিন্তু প্রথমেই হোঁচট খেতে হয় পুলিশকে। এক তদন্তকারী বলেন, “নিহত ব্যক্তির নাম এবং গুরুগ্রাম ছাড়া আমাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।” এমন একটা অবস্থায় সামান্য আলোর দেখা পান গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: যে কোনও কম্পিউটারে চালানো যাবে নজরদারি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বিতর্ক

এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, “মৃতের ঘরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আমরা মহিলাদের একটি রুমাল এবং বাগুইআটি এলাকার একটি হোটেলের বিল খুঁজে পাই।” মহিলার উপস্থিতি জানার পরই খড়দহ থানার আইসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলেই পুলিশ বাগুইআটির ওই হোটেলে যায়। সেখানে প্রতুল আধার কার্ডের ফোটোকপি দিয়েছিলেন। সেখান থেকে কাশীপুরের একটি ঠিকানা পান তদন্তকারীরা।

সেই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারেন অদিতি চক্রবর্তীর কথা। জানা যায় প্রতুলের স্ত্রী অদিতি। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পদস্থ কর্মী অদিতিকে এর পর জেরা শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, খুনের পেছনে কোনও মহিলার ভূমিকা আছে। শেষ পর্যন্ত রাতভর জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেন অদিতি। পুলিশকে তিনি জানান, বছর দশেক আগে তাঁর সঙ্গে প্রতুলের বিয়ে হয়। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রতুলকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু, বিয়ের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ে প্রতুল গুরুগ্রামেই থাকতেন নিজের কর্মক্ষেত্রে। মাঝে মাঝে কাশীপুরে এসে অদিতির সঙ্গে থাকতেন। অদিতির প্রথম পক্ষের একটি ছেলে রয়েছে। এই পক্ষের রয়েছে একটি মেয়ে।

কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতুল তাঁর উপর অত্যাচার করতেন বলে অদিতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলেও জানান অদিতি। প্রতুলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই তাঁকে খুন করেছেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন তিনি। বাজার থেকে প্রতুল প্রচুর ঋণ করেছিলেন অদিতির নাম করে। এমনকি তাঁর কাশীপুরের ঠিকানাও প্রতুল ব্যবহার করেন বলে অদিতির অভিযোগ। দিন কয়েক আগে গুরুগ্রাম থেকে এসে বাগুইআটির একটি হোটেলে উঠে অদিতিকে ডেকে পাঠান প্রতুল। সেখানে তাঁদের মধ্যে টাকাপয়সা সংক্রান্ত কিছু কথা হয়। এর পরেই পানিহাটি এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানেও ডেকে পাঠান অদিতিকে। অদিতি সেখানে যান। তার পরেই রাতেই মত্ত প্রতুলকে খুন করেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন অদিতি।

শুক্রবার অদিতিকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি জোন (২) আনন্দ রায় বলেন, “আমরা ওই মহিলাকে জেরা করছি। কেন তিনি খুন করলেন তা আমরা দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Khardah Barrackpore Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE