সিপিএমের দলীয় কার্যালয়। সেখানে বিজেপির ব্যানার টাঙিয়ে খোলা হয় ‘সিএএ এবং এসআইআর সহায়তা ক্যাম্প।’ উদ্দেশ্য, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে এলাকার ভোটারদের সাহায্য করা। ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার উপনে এলাকা। ওই খবর প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক শোরগোল এলাকায়।
হাবড়ার উপনে এলাকার সিপিএমের কার্যালয়টি বহু পুরনো। বাম আমলে কর্মীদের ভিড়ে গমগম করত এই অফিস। গত বুধবার সেই কার্যালয়ের তালা খুলে বিজেপির পোস্টার টাঙিয়ে ক্যাম্প করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কার্যালয়ের চাবি থাকে খোকন মোহন্ত নামে সিপিএমের এক সদস্যের কাছে। নেতৃত্বের দাবি, খোকন বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই কাজ করেছেন। তাদের পার্টি অফিস দখল নিতে চাইছে বিজেপি। সেটা জানা মাত্র পুলিশ ডেকে কার্যালয় থেকে বিজেপির ব্যানার, পোস্টার ইত্যাদি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত দলীয় সদস্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দলের কার্যালয়ের দরজায় গেরুয়া রঙের রিবন, গেরুয়া বেলুন দিয়ে সাজানো ‘সিএএ এবং এসআইআর সহায়তা ক্যাম্প’ দেখে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য নারায়ণচন্দ্র দাসের দাবি, ‘‘বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পার্টি অফিসে বসে বিজেপির কিছু লোকজন এই কাজ করেছে। পার্টি অফিসের চাবি ছিল খোকনের কাছে। ও পার্টির দীর্ঘ দিনের সদস্য। কিন্তু এখন বিজেপির প্রলোভনে পড়ে ওই কাজ করেছে।’’ সিপিএম নেতার সংযোজন, ‘‘ও (খোকন) দলবিরোধী কাজ করেছে। বিজেপির সঙ্গে ওঁর আঁতাঁত ছিল। বিজেপির হাতে পার্টি অফিস তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল। আরও অনেকে এর পিছনে আছে। তবে খোকনকে এগিয়ে দিয়ে এই কাজ হয়েছে। এর তদন্ত হবে।’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই নিয়ে এলাকায় প্রতিবাদ সভাও করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বিজেপি জানাচ্ছে স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা এখন তাদের শিবিরে। সকলের উদ্যোগে ওই সহায়তা কেন্দ্র করা হয়েছিল। বুধবার সহায়তা কেন্দ্রে জেলা বিজেপির নেতৃত্বের অনেকেই ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, যে খোকনকে এখনও দলের সদস্য বলে দাবি করছে সিপিএম, বিজেপি বলছে তিনি অনেক আগে থেকে বিজেপিতে রয়েছেন। বিজেপি নেতা বিশ্বেশ্বর মণ্ডলের কথায়, ‘‘পার্টি অফিস দখল বা জোর করার প্রশ্নই নেই। যাঁরা সিপিএমে ছিলেন, তাঁরা তো এখন বিজেপিতেই। যা হয়েছে, সকলেই (সিপিএমের) জানতেন।’’ এই সব দেখেশুনে তৃণমূলের খোঁচা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কবে থেকে বলে আসছেন ‘রাম-বাম’ যোগের কথা। হাবড়ায় সেটা সকলে চাক্ষুষ করলেন। তৃণমূল নেতা পুলক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বাংলার বুকে সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেস হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা আবার এক বার প্রমাণ হল হাবড়া-১ ব্লকের উপনের মোড়ের ঘটনায়। সিপিএমের পার্টি অফিসে বিজেপি এসআইআর সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করেছে। আবার ভোট এলে সিপিএমের ভোট ঠিক বিজেপিতে পড়ে। সবই ‘গট আপ।’’’
অভিযুক্ত খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর পুত্র রিপন মোহন্ত বলেন, ‘‘বাবা-মা দু’জনেই সিপিএমের সদস্য। দলের নেতারাই বাবাকে বলেছিলেন সহায়তা কেন্দ্র করতে। এখন সেটা হতেই সবাই বাবাকে দুষছেন। তবে বিজেপির ব্যানার টাঙানো হয়েছিল কি না, আমার জানা নেই।’’