আর কয়েক ঘণ্টা। তৃণমূল থেকে সদ্য সাসপেন্ড হওয়া ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর পূর্ব ঘোষণামাফিক শনিবার বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করবেন বেলডাঙায়। শুক্রবার তার চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে।
মসজিদের শিলান্যাস উপলক্ষে বেলডাঙার মরাদিঘি এলাকায় বিশাল আয়োজন হয়েছে। শনিবার থাকছে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও। সে জন্য মুর্শিদাবাদের সাতটি ‘কেটারিং’ সংস্থাকে খাবার তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। ৪০ হাজার অতিথির জন্য বিরিয়ানি প্রস্তুত করছে তারা। অন্য দিকে, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করেছে প্রশাসন।
হুমায়ুন জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ১২টায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। তবে তার ২ ঘণ্টা আগে থেকে আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম শুরু হয়ে যাবে। রাজ্য থেকে তো বটেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলাম ধর্মগুরুরা আসছেন তাঁর মসজিদের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে। সমস্ত কাজ সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য শুক্রবার থেকে প্রায় ২০০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আয়োজকদের দাবি, মঞ্চ, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে।
মসজিদের শিলান্যাস উপলক্ষে প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা এবং ৮০ ফুট চওড়া একটি মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। প্রায় ৪০০ অতিথির বসার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। মঞ্চ তৈরিতেই প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে বলে দাবি হুমায়ুনের এক ঘনিষ্ঠের। তিনি বলেন, ‘‘অতিথিদের ভোজের জন্য থাকবে শাহি বিরিয়ানি। সে জন্য সাতটি কেটারিং সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। ৪০ হাজার প্যাকেট শাহি বিরিয়ানি ছাড়াও ২০ হাজার স্থানীয় লোকজনের জন্য বিরিয়ানি প্রস্তুত করা হচ্ছে। খাওয়াদাওয়াতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।’’ হুমায়ুন এবং তাঁর ট্রাস্টের তরফে হাজার তিনেক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার কর্মী শুক্রবারই হাত লাগিয়েছেন। ভিড় সামাল দেওয়া থেকে অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে জাতীয় সড়কে যান চলাচল সচল রাখা তাঁদের মূল দায়িত্ব। আয়োজকেরা এ-ও জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গ থেকে বেশ কিছু অতিথি ইতিমধ্যে রওনা হয়েছেন। হুমায়ুনের নিজের দাবি, বেলডাঙার ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের অদূরে মরাদিঘি মোড়ের কাছে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে শনিবার জড়ো হবেন ৩ লক্ষ মানুষ।
শুক্রবার বেলডাঙার মাঠে চলছে প্রস্তুতিপর্ব। —নিজস্ব চিত্র।
একনজরে হুমায়ুনের মসজিদ শিলান্যাসের সূচি:
শনিবার সকাল ৮টা: বিশেষ অতিথিদের আগমন। সৌদি আরব থেকে উড়িয়ে আনা দুই ক্কারী (ইসলামিক ধর্মগুরু) কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিশেষ কনভয়ে মূল মঞ্চে পৌঁছোবেন।
সকাল ১০টা: কোরান তেলাওয়াত শুরু অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে। কোরান পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে।
বেলা ১২টা: শিলান্যাসের মূল অনুষ্ঠান শুরু।
দুপুর ২টো: অনুষ্ঠান সমাপ্তি এবং খাওয়াদাওয়া।
বিকেল ৪টের মধ্যে ফাঁকা করে দেওয়া হবে অনুষ্ঠানস্থল।
এলাকা ঘুরে দেখছেন হুমায়ুন কবীর। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার হাই কোর্টের নির্দেশের পর জেলা পুলিশ প্রশাসন হুমায়ুনের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনা করেছে বলে খবর। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, শনিবার অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রায় তিন হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবে। অতিরিক্ত ভিড়ে জাতীয় সড়ক স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের এক এবং একমাত্র ‘লাইফলাইন’ ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক সচল রেখে সুষ্ঠু ভাবে যাতে ওই অনুষ্ঠান শেষ হয়, সেটাই প্রশাসনের লক্ষ্য। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মূলত জাতীয় সড়কে যাতে ট্রাফিক সচল থাকে, সে দিকেই নজর রাখছি আমরা। সদর দফতর থেকে অতিরিক্ত বাহিনী আনা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থল মূলত দুটি থানা বেলডাঙা এবং রেজিনগরের অন্তর্গত। সংশ্লিষ্ট দুই থানার পুলিশও বিশেষ দায়িত্বে থাকছে।’’