চোলাই কারবারির মৃত্যুতে ছুটি স্কুল

অকালে মৃত্যু হয়েছে গ্রামের মদ্যপ চোলাই ব্যবসায়ীর। সেই দুঃখে ছুটি দিয়ে দেওয়া হল প্রাথমিক স্কুল। বিষমদে মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে সরকারি ক্ষতিপূরণ এ রাজ্য আগেই দেখেছে। এই ঘটনা যেন তারই পদাঙ্ক অনুসরণ।

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

অকালে মৃত্যু হয়েছে গ্রামের মদ্যপ চোলাই ব্যবসায়ীর। সেই দুঃখে ছুটি দিয়ে দেওয়া হল প্রাথমিক স্কুল।

Advertisement

বিষমদে মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে সরকারি ক্ষতিপূরণ এ রাজ্য আগেই দেখেছে। এই ঘটনা যেন তারই পদাঙ্ক অনুসরণ।

ঘটনা মুর্শিদাবাদের সুতি ১ ব্লকের আলোয়ানি গ্রামের। মৃতের নাম বিশ্বজিৎ সরকার (২৮)। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বাড়িতে চোলাই কারবার চলে আসছে বলে অভিযোগ। বিশ্বজিৎ যে নিজেও আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, তা তাঁর মা অঞ্জলি সরকার অস্বীকার করছেন না। যদিও তাঁদের ‘সন্দেহ’, জন্ডিসে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে গাড়িতে করে এক হাতুড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্বজিৎকে। অবস্থা দেখে তিনি তাকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ মৃতদেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়।

আলোয়ানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখন ক্লাস শুরুর তোড়জোড় চলছে। দরজা-জানালা খোলা হয়ে গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই এসে পড়েছে। গ্রামের তৃণমূল নেতা তথা ওই স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদক দীপেন সরকার গিয়ে প্রধান শিক্ষককে স্কুল বন্ধ করার ‘অনুরোধ’ জানান। তাঁর কথায়, “কমবয়েসি ছেলে। স্কুলের কিছু দূরেই ওদের বাড়ি। তাই আমি এবং অন্য গ্রামবাসীরা গিয়ে প্রধান শিক্ষককে স্কুল বন্ধ করতে অনুরোধ করি।”

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁর ছেলে এই স্কুলে পড়ে। এই শোকের পরিবেশে তাই স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ এ ভাবে কি সরকারি স্কুল বন্ধ করা যায়? সুতি ১ ব্লকের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুমন্ত রানা বলেন, “গ্রামের কারও মৃত্যুতে সরকারি প্রাথমিক স্কুল এ ভাবে ছুটি দেওয়া যায় না। ঘটনা সত্যি হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তা হলে কেন ছুটি দেওয়া হল?

প্রধান শিক্ষকের যুক্তি, “স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক বলতে একা আমিই। তিন পার্শ্বশিক্ষকই এই গ্রামের। কিছু গ্রামবাসী এসে স্কুল বন্ধ রাখতে বললেন। পরিস্থিতির চাপে পড়েই ছুটি দিয়ে দিই।” পার্শ্বশিক্ষক দেবাশিস সরকারের দাবি, “ছেলেটি আমাদেরই বন্ধুস্থানীয় ছিল। কান্নাকাটি চলছিল। মানবিক কারণেই স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে। হয়তো সেটা ঠিক নয়। কিন্তু গ্রামের লোকজনকে নিয়েই আমাদের চলতে হয়। তাঁদের অনুরোধ উপেক্ষা করা যায়নি।”

তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সুতি ১ চক্রের সভাপতি দেবব্রত দাস বলেন, “গ্রামের কেউ মারা গেলে স্কুল ছুটি দেওয়া যায় না। পরিস্থিতি অন্য ভাবেও সামলানো যেত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন