প্রতীকী ছবি।
ঘুরপথে সরকারি বাসের ভাড়া বাড়ালেও বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়াতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। বেসরকারি বাসমালিকদের দাবি, বাসপ্রতি তাঁদের ১৮ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। ফলে ভাড়া না বাড়ালে বড়সড় ধাক্কা খাবে রাজ্যের পরিবহণ শিল্প।
বেসরকারি বাসমালিকেরা জানিয়েছেন, সরকার অতীতে দু’ধরনের বাস চালাত। একটি সাধারণ এবং অন্যটি স্পেশ্যাল। সাধারণ বাসের ভাড়া ছিল বেসরকারি বাসের মতোই। স্পেশ্যাল বাসের ভাড়া তার থেকে এক টাকা করে বেশি। তাঁদের দাবি, বছর দুয়েক ধরে সরকার সাধারণ বাস তুলে দিয়েছে। ফলে সরকারি সব বাসই এখন চলে স্পেশ্যাল বাসের ভাড়ায়।
বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কম ভাড়ার এল-৯, ৫, ৬, ৩, ২বি রুটের মতো প্রচুর সরকারি বাসের রুট উঠে গিয়েছে। অলাভজনক রুটে সরকার আর বাস চালাচ্ছে না। শুধু এসি বাস চালিয়ে বেশি টাকা আয় করছে। আর আমাদের অলাভজনক রুটে বাস চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, অলাভজনক রুটে বাস চালাতে না চাইলে পারমিট বাতিল করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ রাজ্যের ৮৫% মানুষকে তাঁরাই পরিষেবা দিচ্ছেন।
মিনিবাসের ভাড়া সাধারণ বাসের চেয়ে এক টাকা বেশি। ফলে বাসের ভাড়া না বাড়ার খেসারত দিতে হচ্ছে একমাত্র বেসরকারি বাসমালিকদেরই। তাঁরা দাবি করেছেন, ২০১৪ সালে শেষ বার বাস ভাড়া বৃদ্ধির পরে সরকার একটি কমিটি তৈরি করেছিল। ওই কমিটি বাসের ভাড়া বাড়া-কমার বাস্তবতা বিচার করে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু গত তিন বছরে ওই কমিটি কোনও কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি। মালিকদের দাবি, এ ভাবে আর বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
অন্য একটি বাসমালিক সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকার তপনবাবুর সুরেই বলেন, ‘‘শুধু বাসের ভাড়া বাড়ালেই হল না। ভাড়ার যে বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে, সেগুলিও পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এগুলি কমিটি করতে পারত। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।’’ দীপকবাবুর দাবি, ‘‘আমরা এক বছর আগে সরকারকে হিসেব করে দেখিয়েছি, একটি বাসে আয় ১০০ টাকা হলে খরচ হয় ১১৮ টাকা। অর্থাৎ বাসপ্রতি আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৮ শতাংশ। অথচ সরকার ভাড়াবৃদ্ধিতে নারাজ।’’ বাসমালিকদের অভিযোগ, গত দু’বছরে একাধিক বার সরকার ভাড়াবৃদ্ধির কথা ভাবার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও ভাড়াবৃদ্ধি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই নেয়নি নবান্ন।
সরকার কী ভাবছে?
নবান্নের একাংশের কর্তাদের দাবি, গত তিন বছরে জ্বালানির দাম খুব-একটা বাড়েনি। যন্ত্রাংশ এবং অন্য খরচ কিছুটা বাড়লেও তাতে ভাড়াবৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। অর্থ দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘বিষয়টি রাজ্য সরকারের নজরে রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার কখনওই সাধারণ মানুষের উপরে অতিরিক্ত বোঝা চাপাতে চায় না। ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’