ন্যায্য মূল্যে ওষুধ, ব্যবসার খাতিরেই যেচে ছাড় বেসরকারি দোকানে

সরকারি হাসপাতাল চত্বরে খোলা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান ছাড় দিচ্ছে বহু দিন ধরেই। এ বার রাজ্যজুড়ে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলার পরিকল্পনা নিলেন বেসরকারি ওষুধের দোকানের মালিকরাও।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share:

সরকারি হাসপাতাল চত্বরে খোলা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান ছাড় দিচ্ছে বহু দিন ধরেই। এ বার রাজ্যজুড়ে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলার পরিকল্পনা নিলেন বেসরকারি ওষুধের দোকানের মালিকরাও। জানালেন, ৬০-৭০ শতাংশ না হলেও তাদের দোকানগুলিতে ওষুধের ছাপানো দামের উপরে অন্তত ৩৫ শতাংশের বেশি ছাড় মিলবে। এখন এই বেসরকারি দোকানগুলিতে ১০-২০ শতাংশের বেশি ছাড় দেওয়া হয় না। বেশি ছাড় পেলে মানুষ বেশি আসবেন। তা ছাড়া, যে সব ক্রেতা বেশি ছাড়ের জন্য সরকারি হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকানে কষ্ট করে যান, তাঁরাও বাড়ির কাছাকাছি দোকানে থেকেই অনেকটা ছাড় পেতে পারবেন।

Advertisement

এই ব্যবসায়ীরাই কিন্তু কিছু দিন আগে পর্যন্ত ওষুধের গায়ে ছাপানো দাম বা এমআরপি-র থেকে এক টাকাও কম নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। এমনকী, ন্যায্য মূল্যের দোকান বাদ দিয়ে বাকি যে সব বেসরকারি ওষুধের দোকান একটু বেশি ছাড়ে ওষুধ বিক্রি করত, তাদের অবিলম্বে ছাড় কমানোর জন্য ফতোয়াও জারি করেছিল ওষুধের দোকানের মালিকদের বৃহত্তম সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’(বিসিডিএ)। সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে বিপুল ছাড় এবং রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে নিখরচায় ওষুধ দেওয়ার জেরে সেই বিসিডিএ-ই এখন ব্যবসা বাঁচাতে যেচে ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে চাইছেন।

তারা এ বার সংগঠনগত ভাবে রাজ্যজুড়ে ওষুধের দোকানের চেন খুলছে। সেখানে সমবায়ের ধাঁচে সংগঠনের সদস্যরা নথিভুক্ত হবেন এবং অর্থলগ্নি করবেন। এবং বছরের শেষে লাভের অংশ পাবেন। অনেকে একসঙ্গে থাকার ফলে লগ্নির পরিমাণ বেশি হবে এবং ওষুধের দামের উপরে ৩০ শতাংশের বেশি ছাড় তাঁরা দিতে পারবেন বলে মনে করছেন। বিসিডিএ-র সাধারণ সম্পাদক সুবোধ ঘোষ জানান, আলাদা-আলাদা দোকান এ ক্ষেত্রে নিজস্ব চেন তৈরি করবে না। দোকান হবে পুরোপুরি বিসিডিএ-র নামে। রাজ্য জুড়ে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা অন্তত ৩৫ হাজার। এক-একটি অঞ্চলে সংগঠনের ওই দোকানে সংগঠনের সেই অঞ্চলের সদস্যরা অর্থলগ্নি করতে পারবেন। বিপুল সদস্য গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে থাকায় বিভিন্ন প্রান্তে দোকান ছড়িয়ে দিতেও সুবিধা হবে।

Advertisement

রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষ দু’জনেই অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘এমআরপি-তে যে টাকা লেখা আছে সেটাই নিচ্ছিলেন অনেক দোকানি। ছাড়ের ধার ধারছিলেন না। ভুগছিলেন সাধারণ মানুষ। সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলার পিছনে ওই দোকানগুলিকে আবার ঠিকঠাক দাম নিতে বাধ্য করানোটাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। বিসিডিএ-র এই সিদ্ধান্তে প্রমাণিত হল যে, সরকারের পরিকল্পনাটা সঠিক ছিল।’’ সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি।’’ বিসিডিএ-র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে কলকাতায় পাঁচটি, হুগলিতে তিনটি ও হাওড়ায় দু’টি দোকান খোলা হবে।

বিসিডিএ-র কর্তাদের মতে, মূলত ছোট ওষুধের দোকানের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। কারণ, তাদের পক্ষে দামের উপরে ২৫ বা ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা বড় দোকানগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ক্রেতারা এখন অনেক বড় দোকানে ৫০-৭৫ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ পাচ্ছেন সেখানেই যাচ্ছেন। ফলে অনেক ছোট দোকান বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। তাঁদের কথায়, ‘‘উপায় নেই। প্রতিযোগিতার বাজারে না ঢুকলে আর বাঁচা যাবে না। ফলে ওষুধের দামে বেশি ছাড়ের দিকে যেতেই হবে।’’

প্রসঙ্গত, লাভের কথা মাথায় রেখে এ বার রাজ্যে ১০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনাও করেছে বিসিডিএ। এর জন্য জমি চাইতে ২৬ সেপ্টেম্বর নবান্নে বৈঠকে যাচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন