প্রতিবন্ধী নিগ্রহ, তিন শিক্ষিকার নামে অভিযোগ

তাঁর ছেলের উপরে ইতিহাস বিভাগের তিন শিক্ষিকা প্রায় চার বছর ধরে মানসিক নিগ্রহ চালাচ্ছেন বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবন্ধী ছাত্রের মা অভিযোগ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৭
Share:

তাঁর ছেলের উপরে ইতিহাস বিভাগের তিন শিক্ষিকা প্রায় চার বছর ধরে মানসিক নিগ্রহ চালাচ্ছেন বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবন্ধী ছাত্রের মা অভিযোগ করেছেন। উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে মায়ের অভিযোগ, শিক্ষিকাদের নিগ্রহের জেরেই তাঁর ছেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে জানান, ছাত্রটিকে ‘সিক বেড’-এ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

Advertisement

সন্তোষপুর হিন্দ রোডের বাসিন্দা রামতনু বন্দ্যোপাধ্যায় যাদবপুরের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মায়ের কথায়, ‘‘আমার ছেলে জন্ম থেকেই ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। হাঁটতে পারে না। লিখতেও পারে না।’’ রামতনু গত ২৭ নভেম্বর ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে মায়ের অভিযোগ। বিপদ কাটলেও এখনও তিনি অসুস্থ। সেই ঘটনার পরেই, গত মঙ্গলবার ইতিহাস বিভাগের প্রধান এবং বুধবার উপাচার্যের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ‘সুবিচার’ চেয়েছেন রামতনুর মা বৈশাখীদেবী।

রামতনু এ দিন সন্তোষপুর লেক এলাকায় মামার বাড়িতে বসে অভিযোগ করেন, স্নাতক স্তর থেকেই বিভাগের দুই শিক্ষিকা তাঁকে নানা ধরনের কটূক্তি করতেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি কিছু বিশেষ সুবিধা পান বলে তাঁকে ব্যঙ্গ করতেন ওই শিক্ষিকারা। স্নাতকোত্তর স্তরে আরও এক জন শিক্ষিকা এর সঙ্গে যুক্ত হন। রামতনুর অভিযোগ, ‘‘ওই শিক্ষিকারা বলতেন, আমার প্রতিবন্ধকতা নাকি ঈশ্বরপ্রদত্ত এবং সেই কারণে আমি নানা সুযোগ-সুবিধা পাই। অথচ এ-সব আমার পাওয়ার কথাই নয়।’’ নিগ্রহ শুধু বচনে নয়। রামতনুর অভিযোগ, স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমেস্টারে তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে দু’টি পত্রে ফেল করানো হয়েছে এবং রিভিউয়ে তাঁর নম্বর ইচ্ছাকৃত ভাবে আরও কমিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

বৈশাখীদেবীর অভিযোগ, লাগাতার লাঞ্ছনার জেরে রামতনু ২৭ নভেম্বর ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মা তখন ছোট ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, রামতনু প্রচুর ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাড়া পেয়েছেন রবিবার। কিন্তু যিনি ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী, তিনি একা কী করে ঘুমের ওষুধ খেলেন? স্পষ্ট জবাব দেননি মা।

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন রামতনুর মা। সেখানে ছিলেন ডিন অব আর্টস রজত আচার্য। ছাত্রের মায়ের অভিযোগ শুনে সব দিক খতিয়ে দেখে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য। ঠিক হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলবেন ডিন।

ছাত্রটির পরীক্ষার ফলের কী হবে?

উপাচার্য বলেন, ‘‘যে-পরীক্ষায় রামতনুকে ফেল করানো হয়েছে বলে অভিযোগ, তার উত্তরপত্র আমি নিজে দেখব। ভুল থাকলে রামতনুকে পাশে বসিয়ে ভুল বুঝিয়ে দেব।’’ এখন স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। অসুস্থ থাকায় পরীক্ষায় বসতে পারেননি রামতনু। কিছুটা সুস্থ হলে ‘সিক বেড’-এ তাঁর পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেবেন উপাচার্য।

যে-তিন জন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এ দিন তাঁদের দু’জনের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। এক জন ফোন ধরলেও কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন