প্রতীকী ছবি।
বিনামূল্যে বই-খাতা, জুতো, ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে। এ বার স্কুলপড়ুয়াদের শীতের পোশাক এবং বর্ষাতি বা ছাতা দেওয়ার প্রস্তাব দিল শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি। তারা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ওই কমিটি চায়, রাজ্য সরকার সাধ্যমতো এই প্রস্তাব বিবেচনা করুক।
‘‘বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। বর্ষাতি বা ছাতা এবং শীতের পোশাক দেওয়ার মতো আর্থিক সংস্থান স্কুলশিক্ষা দফতরের আছে কি না, আগে সেটা দেখতে হবে। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,’’ বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শিক্ষা কমিটির উপদেষ্টাদের এক জন জানান, এখন প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জুতো ও স্কুলব্যাগ দেওয়া হয়। সেই রকমই ছাতা ও শীতের পোশাক দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। কেন এই প্রস্তাব, তার ব্যাখ্যা দিয়ে ওই সদস্য জানান, রাজ্যে এখন জুনে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। বর্ষায় গ্রামাঞ্চলে পড়ুয়াদের স্কুল যাওয়ার হারও কমে যায়। সেই জন্য তাদের ছাতা বা বর্ষাতি দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আর শীতের পোশাক চাই মূলত গ্রামীণ পড়ুয়াদের জন্য। এ রাজ্যে শীত তেমন স্থায়ী হয় না ঠিকই। শহরে শীতের প্রকোপ কম। কিন্তু উত্তরবঙ্গ এবং গ্রামের দিকে ঠান্ডা পড়ে ভালই। ওই সব এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য শীতের পোশাক খুবই জরুরি।
মন্ত্রীর মতো টাকার প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষা দফতরের লোকজনও। মন্ত্রীর বক্তব্যে আশ্বাসের সুর থাকলেও ওই দফতরের এক কর্তা জানান, স্কুল রং করার কাজ চলছে। এতে খরচ প্রচুর। তাই ছাতা বা শীতের পোশাকের ব্যাপারে এখনই উপদেষ্টা কমিটির প্রস্তাব রূপায়ণ করা মুশকিল।
অর্থ সংস্থান নিয়ে সংশয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের পড়ুয়া-বান্ধব প্রস্তাব বা উদ্যোগের ফলে শিক্ষামানের কতটা কী উন্নতি হচ্ছে, আদৌ হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, পড়ুয়াদের জুতো, ব্যাগ, পাঠ্যবই দেওয়া হলেও পড়াশোনার মানের তেমন উন্নতি চোখে পড়ছে না। বিশেষত উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থমকে থাকায় পঠনপাঠনের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হচ্ছে।
নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সুবিধার্থে সরকার যে-সব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা খুবই ভাল। কিন্তু স্কুলে পঠনপাঠনের যে-অবনতি হচ্ছে, সেই দিকেও সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির দাবি, নতুন পাঠ্যক্রম চালু করার পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও নতুন পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে পঠনপাঠনের মান উন্নতির দিকে অনেকটাই এগিয়েছে। ‘‘এর সঙ্গে পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পরিষেবা দিলে তারা আরও লাভবান হবে,’’ বলেন ওই শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক অজিতকুমার নায়েক।