পুলওয়ামা-কাণ্ডের পটভূমিতে এ শহরের দু’দশকের বাসিন্দা কাশ্মীরি চিকিৎসকের কলকাতায় থাকা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। সেই পটভূমিতেই যেন অভূতপূর্ব ঐক্যে মিলে গিয়েছে প্রথম সারির সব রাজনৈতিক দল।
দিন চারেক আগে তপসিয়া এলাকার বাসিন্দা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের গাড়ি ঘিরে উটকো বিক্ষোভের একটি ঘটনা ঘটেছিল। কেউ কেউ তাঁকে বলে, ‘‘এটা আপনার দেশ নয়, চলে যান।’’ এর পরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েও কিছু কটূক্তি শুনতে হয় ডাক্তারবাবুকে। কিন্তু এর পরে সাহায্যের হাত বাড়াতেই তাঁর পাশে জুটে যায় বেশ ক’জন সুহৃদের হাত! লালবাজারে খবর যেতে, পুলিশ পাহারাও বসে ওই চিকিৎসকের বাড়িতে।
তারপরেও ওই চিকিৎসকের মেয়েদের স্কুলে কয়েক জন পড়ুয়ার ব্যবহারে তারা কষ্ট পেয়েছিল বলে আহত হয় পিতৃহৃদয়! কিন্তু তখনও ব্যথার উপশমে এগিয়ে এসেছেন সহ-নাগরিকেরাই। রাজ্য শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্কুলে ডাক্তারবাবুর ছোট দুই মেয়ের ক্লাসের কয়েক জন কথা না-বলে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া গোছের কিছু ঘটনা ঘটেছিল। স্পর্শকাতর পরিস্থিতি, ওঁরা দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। এখন সব কিছু ঠিক আছে। আমি নিজে ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টা দেখছি।’’ রাতে ওই চিকিৎসক তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে এসএমএস করে তাঁকে ঘিরে যাবতীয় জল্পনার জবাব দিয়েছেন বলে খবর। সেই বার্তাটির বয়ান: ‘‘কলকাতা ছাড়ছি না। ছাড়ব না। গোটা বাংলার কাছে যে ভালবাসা পেয়েছি, তা অভাবনীয়। সরকার, পুলিশ সবাই পাশে আছে। বাংলা ছাড়ার পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে অহেতুক রটনা অনভিপ্রেত। মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ।’’ এ দিন সকালে আনন্দবাজারকেও এসএমএস-এ ‘সব ঠিক আছে’ লেখেন তিনি।
সাম্প্রদায়িক ফাটল ধরানোর যে কোনও চেষ্টায় কড়া ব্যবস্থা নিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার পুলিশের সর্বস্তরে নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিনই লালবাজারে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নতুন সিপি অনুজ শর্মা। তিনিও বলেন, ‘‘শহর কলকাতায় কাশ্মীরি-সহ সব ধরনের মানুষের নিরাপত্তা পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা দায়বদ্ধ।’’ কাশ্মীরি চিকিৎসকের সমস্যা নিয়েও সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্যের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলা সব ভারতীয়ের জন্য। নাগরিক অধিকার রক্ষায় আমরা সারা ক্ষণ সতর্ক।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান রাজনৈতিক বিবাদ সরিয়ে প্রশাসনের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গুজরাত দাঙ্গার পরে পীড়িতদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়েছে বাংলা। কলকাতার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কাশ্মীরি নাগরিকদেরও পাশে রয়েছে।’’ কাশ্মীরি হলেই কাউকে অপরাধী বলা যায় না বলে মনে করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনেরই দায়িত্ব সবাইকে সুরক্ষা দেওয়ার।’’