‘নির্মল প্রকল্প’ ৪৫%

এখনও মাঠে যান ১৬ লক্ষ

পেটের রোগে ভোগেন জেলার আশি শতাংশ মানুষ। আর মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে রাজ্যের নিরিখে জেলার স্থান একেবারেই তলানিতে— কাজের অগ্রগতি মোটে ৪৫ শতাংশ। বৈঠকে এই তথ্য তুলে ধরে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনকে পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বললেন, ‘‘এর পরেও আপনাদের লজ্জা করবে না?’’

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৯
Share:

বৈঠক: রবীন্দ্রসদনে জেলা সভাধিপতি ও জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র

জেলার ১৬ লক্ষ মানুষ এখনও শৌচ করেন মাঠে। পেটের রোগে ভোগেন জেলার আশি শতাংশ মানুষ। আর মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে রাজ্যের নিরিখে জেলার স্থান একেবারেই তলানিতে— কাজের অগ্রগতি মোটে ৪৫ শতাংশ। বৈঠকে এই তথ্য তুলে ধরে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনকে পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বললেন, ‘‘এর পরেও আপনাদের লজ্জা করবে না?’’

Advertisement

শনিবার পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে জেলার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত কর্মী, জেলার ২০ জন বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক হয়। ছিলেন জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং জেলা প্রশাসনে পদস্থ কর্তারা।

সেখানে জেলাশাসক বলেন, ‘‘দুঃখের বিষয়, ২০১২ সালে কাজ শুরু করেও এই প্রকল্পে আমাদের অগ্রগতি মোটে ৪৫ শতাংশ। লজ্জা করে, জেলার ৩০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৬ লক্ষ জন এখনও মাঠে শৌচ করেন।’’ জেলায় ২০১৮-র স্বাধীনতা দিবসে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যকে নির্মল হিসাবে ঘোষণা করতে চান। সে ক্ষেত্রে পুরুলিয়ার এই দশা অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জক বলে মন্তব্য করলেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়।

Advertisement

খোলা মাঠে শৌচ থেকে কী ভাবে বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়ায়, সে সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র দেখিয়ে জেলাশাসক জানান, পুরুলিয়ার আশি শতাংশ মানুষ পেটের রোগে ভোগেন, একটি সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। খোলা মাঠে শৌচই যে এর অন্যতম বড় কারণ, সে কথাও সমীক্ষায় উঠে এসেছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘‘কেন মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন এক বার ভাববেন না? বাংলাদেশ কোনও সরকারি সহায়তা ছাড়াই যদি ২০১০ সালে নির্মল হতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না?’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার কতগুলি পরিবারে শৌচালয় নেই তা জানতে একটি সমীক্ষা হয়। দেখা যায় ৫,৩৯,০২৭টি পরিবারের মধ্যে শৌচালয় রয়েছে ৯৭,৯২৩টি পরিবারের। ৪,৪১,১০৪টি পরিবারে শৌচালয় গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে শুরু হওয়ার পরে এখনও তৈরি হয়েছে মোটে ২,৪০,১৫১টি শৌচালয়। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ছ’বছরে কাজ হয়েছে ৪৫ শতাংশ। এখনও প্রায় ২,৯৬,০০০টি শৌচালয় গড়তে হবে। জেলার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৪২টি সংসদ রয়ছে। এলাকার সবাই মিলে চেষ্টা করলে এই কাজ কঠিন কিছু নয়।’’ জেলাশাসক কাজ শেষ করার জন্য ১২০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন।

তবে ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যে খুব সহজ হবে, এমনটাও নয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত জানান, সে ক্ষেত্রে কাজ শেষ করতে হলে প্রতিদিন জেলায় ২,৯৮৮টি করে শৌচালয় গড়তে হবে। ব্লকে গড়তে হবে রোজ ১৭৫টি শৌচালয়। ছুটির দিনগুলি বাদ দিলে আবার সংখ্যাটা আরও বাড়বে।

কেন ওই প্রকল্পের বেহাল দশা তা এ দিনের বৈঠকে পঞ্চায়েত কর্মী এবং প্রধানদের কাছে জানতে চান জেলাশাসক। এক প্রধান দাবি করেন, বালি পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে কাজের গতি কমছে। জেলাশাসক জানান, সরকারের নির্দেশেই আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালি তোলার উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাঁর নির্দেশ, ‘‘তত দিনে আপনারা বাকি কাজটা সেরে নিন। মানুষের মধ্যে গিয়ে প্রচারের কাজ করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন