প্রতীকী চিত্র।
এক স্কুল ছাত্রী-সহ জেলার তিন জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলল। বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ম্যাক অ্যালাইজা টেস্টের পরে তিন জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, আক্রান্ত স্কুল ছাত্রীর নাম কবিতা খাতুন। বাড়ি দুবরাজপুর পুর এলাকায়। অন্য দু’জন হলেন সদাইপুর থানা এলাকার শেখ কাজু এবং মুরারইয়ের বাসিন্দা শেখ সফিকুজ্জামান। প্রথম দু’জন সিউড়িতে, অন্য জন রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিন জনের অবস্থাই অবশ্য স্থিতিশীল।
গত বছর জেলায় ডেঙ্গির প্রভাব ছিল যথেষ্টই। প্রায় ৫০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দোসর ছিল ম্যালেরিয়াও। বছর ঘুরে ফের হাজির হয়েছে মশাবহিত রোগের মরসুম। আগের বছর মোট ২৭৬৯ জনের ডেঙ্গি নির্ণায়ক ম্যাক অ্যালাইজা টেস্ট করানো হয়েছিল। ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল ৪৮৮ জনের শরীরে। এই আবহে মশাবাহিত রোগের মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত জেলা, বিশেষ করে পুর এলাকাগুলি— সেই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুর ও সদাইপুরে দু’জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গি মেলায় সতর্ক করা হয়েছে পুরশহর এবং জেলা সদর সিউড়িকে। বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর স্থানীয় পুরপ্রধান ও কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি বৈঠক থেকে মশা নিয়ন্ত্রণ ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। একই ভাবে দুবরাজপুর পুর এলাকায় ডেঙ্গি রুখতে কী করণীয়, কী ভাবে সচেতন করা হবে— তা নিয়ে আজ, শুক্রবার দুপুরে পুরপ্রধান ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করবেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেহেতু পড়শি পুর এলাকায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে, তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী দিনেও নেব।’’ একই আশ্বাস দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডের। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শনিবার থেকেই মশানাশক রাসায়নিক স্প্রে ছড়ানো শুরু করব। সমস্ত কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পরমর্শ মেনে বাড়িতে বাড়িতে সচেতনতা প্রচারও চলবে।’’
দুটি পুর এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য প্রশ্ন, আগে কী করছিল পুরসভা? তাঁদের অভিযোগ, মশাদের আঁতুরঘর বলে পরিচিত শহরের নিকাশি নালাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। নিকাশি নালায় জল জমে রয়েছে। একই ভাবে আবর্জনার স্তুপ জমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। মাস দু’য়েক আগে মশানাশক স্প্রে করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ওই পর্যন্তই।
দুবরাজপুরে আক্রান্ত ছাত্রী, কবিতার বাড়ি সাত নম্বর ওয়ার্ডে। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী দিন তিনেক আগে ধুম জ্বর, সারা শরীরের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়। কবিতার বাবা, পেশায় মাতৃযান চালক সামদ মোল্লা বলেন, ‘‘শুধু মেয়ে নয়। একই উপসর্গ নিয়ে দুবরাজপুর হাসপাতালে ভর্তি হয় ছেলে বাদশা মোল্লাও। এক দিন পরেই রোগের প্রকোপ দেখে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেয় দুবরাজপুর হাসপাতাল।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, একই উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি রেফার করা হয়েছে বছর ছয়েকের এক শিশুকন্যাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্য দফতর ও পুর কর্তৃপক্ষই ভরসা বাসিন্দাদের।