পিছিয়ে গেল ৩৩টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়া

প্রথম দিনের গোলমালে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে পুরুলিয়ার ৩৩টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দেওয়া হল। ‘উত্তেজনাপ্রবণ’ দাবি করে জেলা প্রশাসন এ দিন ৬১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টি ব্লকের ৩৩টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

প্রথম দিনের গোলমালে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে পুরুলিয়ার ৩৩টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দেওয়া হল। ‘উত্তেজনাপ্রবণ’ দাবি করে জেলা প্রশাসন এ দিন ৬১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টি ব্লকের ৩৩টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ওই সিদ্ধান্ত আসলে যে কোনও ভাবে পুলিশ ও প্রশাসনের বিজেপিকে ঠেকানোর চেষ্টা বলেই জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু।

Advertisement

সোমবার পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে ঘিরে গুলি চলে জয়পুরের ঘাগরায়। গুলিতে দুই বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়। আহত হন তিন জন। রঘুনাথপুর মহকুমার তিন ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। গুলিতে আহত হন রঘুনাথপুরের খাজুরা পঞ্চায়েতের বিজেপির এক সদস্য। বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে সাঁতুড়ি থানার ওসি-সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। রঘুনাথপুর ২-এর একটি পঞ্চায়েতে ভাঙচুর হয়।

মঙ্গলবার ও বুধবার জেলার বাকি পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের কথা ছিল। তার মধ্যে এ দিন যে সব পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের কথা ছিল, তার মধ্যে ৩৩টিতে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। সকালেই তিনি ওই ১৪টি ব্লকের বিডিওদের নির্দেশ দেন। কেন বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হল? বিশদে উত্তর দিতে চাননি জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই কিছু পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে সেগুলিতে বোর্ড তৈরি হবে।” এ দিন বাকি ২৮টি পঞ্চায়েতে নির্বিঘ্নেই বোর্ড হয়েছে।

Advertisement

সূত্রের খবর, ওই ৩৩টি পঞ্চায়েতে শাসক-বিরোধী সব দলই বোর্ড গড়তে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। সে কারণে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে সেখানে গোলমালের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রশাসনের একটি অংশ।

প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে বিজেপির কয়েক জন কর্মী-সমর্থকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে রাজ্য সরকারের শীর্ষ মহলও চাইছে না, বোর্ড গঠনকে ঘিরে আর কোনও অশান্তি তৈরি হোক। অন্যদিকে, কয়েক সপ্তাহ আগেই জেলার সমস্ত থানা নিজেদের এলাকার উত্তেজনাপ্রবণ পঞ্চায়েতগুলি নিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্টেই উল্লেখ করা ছিল, কোন কোন পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে ঘিরে অশান্তি হতে পারে। সেই রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে ও নিজের মতো করে খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসন এই ৩৩টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন আপাতত স্থগিত করে দিয়েছে।

যদিও এর মধ্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা। বিজেপির দাবি, এ দিন স্থগিত না করা হলে ৩১টির মধ্যে ২০টিতে তারাই বোর্ড গড়ত। আর ত্রিশঙ্কু থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধীরা মিলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোর্ড গড়ত। সব মিলিয়ে হাতে গোনা চার-পাঁচটি পঞ্চায়েত ছাড়া বাকি সব পঞ্চায়েতে বোর্ড হত বিরোধীদের। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘কোনও যুক্তি নেই এই নির্দেশের পিছনে। শুধু একটাই যুক্তি আছে, জেলা প্রশাসন ওই সমস্ত পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দিয়ে তৃণমূলকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য আরও কয়েকটি দিন বাড়তি সময় দিল।’’

বরাবাজারের ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ভগীরথ মাহাতোর দাবি, ‘‘বরাবাজারের স্থগিত হয়ে যাওয়া ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতে বিরোধীরা মিলে বোর্ড তৈরি করত। তা বুঝেই বোর্ড গঠন স্থগিত করা হল।’’ এ নিয়ে জবাব দিতে চাননি জেলাশাসক। তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর পাল্টা দাবি, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। স্থগিত হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েতগুলিতে যে কোনও দলই বোর্ড গঠন করতে পারে। স্থানীয় স্তরে অশান্তির সম্ভাবনা রয়েছে দেখেই সেখানে বোর্ড গঠন আপাতত স্থগিত করে দিয়েছে প্রশাসন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন