এক বাইকে চার জনে দুর্ঘটনায়, মার খেল পুলিশ

মোটরবাইকে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সওয়ার দম্পতি। চালক, স্বামীর মাথায় হেলমেট। বাকিদের মাথা ফাঁকা। চালকের কাছে মোটরবাইকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নেই। শুক্রবার বীরভূমের চন্দ্রপুর থানা এলাকায় এমন একটি মোটরবাইককে আটকেছিল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৭
Share:

জনতা ঠেলে ফেলছে পুলিশের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

মোটরবাইকে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সওয়ার দম্পতি। চালক, স্বামীর মাথায় হেলমেট। বাকিদের মাথা ফাঁকা। চালকের কাছে মোটরবাইকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নেই। শুক্রবার বীরভূমের চন্দ্রপুর থানা এলাকায় এমন একটি মোটরবাইককে আটকেছিল পুলিশ। ছেড়েও দেয়। কিন্তু পরে ওই মোটরবাইকটি দুর্ঘটনায় পড়ায় মার খেল পুলিশই।

Advertisement

অভিযোগ উঠল, পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং আহতদের উদ্ধার করেও হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেনি পুলিশ। জনতা বেদম পেটায় দুই পুলিশকর্মীকে। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‌বোলপুর) সুবিমল পাল বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে হামলা হয়েছে পুলিশকর্মীদের উপরে।’’ একই বক্তব্য এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তথা রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার সাধুর।

বক্রেশ্বর থেকে চন্দ্রপুর যাওয়ার রাস্তায় এ দিন সকালে ‘গার্ড রেল’ দিয়ে কিছুটা আটকে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করছিলেন চন্দ্রপুর থানার পুলিশকর্মীরা। সেই সময় সিউড়ির ছোড়া গ্রামের বাসিন্দা জগদীশ মণ্ডল নামে এক যুবক সপরিবার মোটরবাইকে বক্রেশ্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। একটি মোটরবাইকে চার জনকে দেখেই পুলিশ তাঁদের দাঁড় করায়। দেখা যায়, জগদীশবাবুর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।

Advertisement

জগদীশবাবুর দাবি, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা প্রথমে তাঁকে জরিমানা দিতে বলেন। পরে ‘সঙ্গে বাচ্চা আছে’— অনুনয় শুনে ছেড়ে দেন। কিন্তু ‘গার্ড রেল’ পেরিয়ে তিনি কিছু দূর এগোতেই ‘পিছু নেয়’ পুলিশের গাড়ি। তাঁর কথায়, ‘‘ঘাড় ঘুরিয়ে পুলিশের গাড়িটাকে দেখতে গিয়ে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারাই। পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে যাই চার জন।’’

তবে পুলিশ সূত্রের দাবি, মোটরবাইকের প্রয়োজনীয় নথি, তিন জনের মাথায় হেলমেট না থাকায় এবং এক মোটরবাইকে চার জন সওয়ার হওয়ায় জগদীশবাবুকে ‘মৃদু ধমক’ দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত জগদীশবাবু মদ্য পান করেছিলেন। তাই তিনি অস্থায়ী ‘চেক-পোস্ট’ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ হারান এবং দুর্ঘটনায় পড়েন।

জখম জগদীশবাবুর পরিবার।

গাড়ি নিয়ে গিয়ে চার জনকেই উদ্ধার করেন ‘চেক-পোস্ট’-এ থাকা পুলিশকর্মীরা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই পরিবারের চার জনকে সিউড়ি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল আমাদের গাড়িতেই। কিন্তু রাস্তায় ওই যুবক কাউকে ফোন করে বলেন, ‘পুলিশের জন্য পড়ে গিয়েছি। লেগেছে। তোরা আয়’। ওই ফোনের জেরে রাস্তায় সমস্যা হতে পারে ভেবে ওঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’

পাথরচাপুড়ির পারুলিয়া মোড়ে গাড়ি থামিয়ে দেন পুলিশ-কর্মীরা। তাঁদের দাবি, জগদীশবাবু রাস্তায় নেমে চিৎকার শুরু করেন। কিছু লোক জুটে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ‘‘গাড়িতে একটি বাচ্চা মেয়ে আহত অবস্থায় ছটফট করছিল। তা দেখে জনতা পুলিশের উপরে চড়াও হয়।’’

পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশই জগদীশবাবুর পরিবারকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে সিউড়ি হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, জগদীশবাবু ও তাঁর দশ বছরের ছেলে দেবের চোট সামান্য। জগদীশবাবুর স্ত্রী সায়নী এবং সাত বছরের মেয়ে রিয়ার হাতে-মাথায় চোট লেগেছে। তবে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।

ঘটনা শুনে এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নেন তৃণমূল নেতা সুকুমার সাধু। তিনি বলেন, ‘‘খবর নিয়ে দেখেছি, দোষ ওই পরিবারের। ফোনে ভদ্রলোক তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন শুনে গাড়ি থামিয়েছিল পুলিশ। পরে পরিবারটির চিৎকারে জড়ো হয়ে কিছু লোক এই কাণ্ড করেছে।’’ সবার মাথায় হেলমেট না থাকা বা তাঁর কাছে কাগজপত্র না থাকার যে অভিযোগ পুলিশ করেছে, সে প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ জগদীশবাবুর। তিনি দাবি করেছেন, ‘‘মদ খাইনি। আর ফোনে ভাইয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। পুলিশ তা শুনে কেন ভয় পেল, পুলিশই বলতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন