দানের বইয়ে শুরু, আজ জেলার সেরা 

এ বার পাঠক পরিষেবায় জেলায় সেরার শিরোপা পেতে চলেছে নানুরের চণ্ডীদাস স্মৃতি সাধারণ পাঠাগার। স্বভাবতই এলাকায় বইছে খুশির হাওয়া।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

নানুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫০
Share:

বাজারে বসেই গল্প শোনা। নিজস্ব চিত্র

মহকুমা স্তরে আগেই সেরা হয়েছিল। এ বার পাঠক পরিষেবায় জেলায় সেরার শিরোপা পেতে চলেছে নানুরের চণ্ডীদাস স্মৃতি সাধারণ পাঠাগার। স্বভাবতই এলাকায় বইছে খুশির হাওয়া। জেলা গ্রন্থাগার অধিকর্তা নির্মাল্য অধিকারী জানিয়েছেন, গ্রামীণ গ্রন্থাগার হিসাবে নানুর এবং শহর গ্রন্থাগার হিসাবে রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল গ্রন্থাগার বীরভূমে পাঠক পরিষেবায় সেরা নির্বাচিত হয়েছে। নজরুল মঞ্চে তাদের শংসাপত্র-সহ পুরস্কৃত করা হবে।

Advertisement

গ্রন্থাগার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রন্থাগারে পাঠক সংখ্যা ২২৭১ জন। দৈনিক গড় হাজিরা ৬০ শতাংশ। বই রয়েছে ৬৯০০টি। দেশ, সানন্দা, আনন্দমেলা, কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান-সহ ১৬টি পত্রপত্রিকা রাখা হয়। দৈনিক গড়ে ৩০টি বই আদান প্রদান হয়। জেলায় একমাত্র এই গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে মাসে এক দিন বোলপুরে সংশোধনাগারে বন্দিদের জন্য ভ্রাম্যমান পাঠক পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে পাঠানুরাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ নিয়মিত নানুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে গল্প শুনিয়ে আসেন।

সাহিত্য চর্চা বিকাশেও কাজ করে চলেছে চণ্ডীদাস স্মৃতি সাধারণ পাঠাগার। প্রতি মাসের প্রথম শনিবার সেখানে সাহিত্য পাঠের আসর বসে। নামী সাহিত্যিকদের পাশাপাশি যোগ দেন নবীনেরাও। ওই সাহিত্য সভায় পাঠ করা সারা বছরের রচনা সম্ভার সংগ্রহ করে রাখা হয়। সেখান থেকেই বাছাই করে প্রকাশিত হয় বাৎসরিক সাহিত্য পত্রিকা ‘চণ্ডীদাস’। ওই পত্রিকাতেই প্রথম আত্মপ্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন এলাকার বহু নবীন সাহিত্যকর্মী। এ ছাড়াও বিভিন্ন মনীষীর জন্মদিন ও মৃত্যুদিন, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের পালনের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ,

Advertisement

জলসংরক্ষণ, ডেঙ্গি প্রতিরোধের মতো সমাজ সচেতনতা মূলক প্রচার অভিযানও নানুরের এই গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে করা হয়ে থাকে। ২০১৫ সালে এই পাঠাগার বোলপুর মহকুমায় পাঠক পরিষেবায় সেরা গ্রন্থাগার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৭ সালে মেলে মডেল লাইব্রেরির স্বীকৃতি। এ বার পাঠক পরিষেবায় গ্রামীণ গ্রন্থাগার হিসাবে জেলার সেরা।

শুরুতে চলার পথটা অবশ্য এত মসৃণ ছিল না। সে প্রায় উনষাট বছর আগের কথা। সেই সময় গ্রামাঞ্চলে বিনোদনের তেমন কোনও মাধ্যম ছিল না। বই পড়াই ছিল সময় কাটানোর অন্যতম উপায়। বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া হাতে গোনা গুটি কয়েক বঙ্কিম, শরৎ, বিভূতিভূষণ প্রভৃতি রচনা সম্ভার এ-বাড়ি, ও-বাড়ি চালাচালি করে বই পড়ার খিদে বেড়ে যায় এলাকার বাসিন্দা বিশেষত মহিলাদের। কিন্তু, কাছেপিঠে কোনও পাঠাগার ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দাদের এহেন চাহিদা মেটাতে উদ্যোগী হন অসীম ভট্টাচার্য, মানিকচাঁদ রায়, শান্তি সরকার, সত্যগোপাল সরকার, গয়ানাথ মণ্ডলদের মতো বেশ কয়েক জন শিক্ষানুরাগী। তাঁরাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিয়েতে পাওয়া ওই সব বই দান হিসেবে সংগ্রহ করেন। তাই দিয়েই ১৯৬০ সালে বিশালাক্ষী মন্দির লাগোয়া প্রয়াত প্রভাতী ভট্টাচার্যের মাটির বাড়িতে চালু হয় গ্রন্থাগার। ১৯৮০ সালে সরকারি অনুমোদন পায় সেই গ্রন্থাগার। পরবর্তী কালে স্থানীয় একটি ক্লাবের দেওয়া জায়গায় তৈরি হয় দোতলা পাকা বাড়ি।

তাঁদের গড়া গ্রন্থাগারের এ হেন উত্তরণে আবেগে আপ্লুত ওই সব স্থপতি। তাঁদের কথায়, ‘‘সেদিন কেউ দিয়েছিলেন বই, কেউ বা আসবাব। তাই নিজেরাই পালাক্রমে শুরু করেছিলাম পাঠক পরিষেবা। সেই গ্রন্থাগার আজ জেলার সেরার স্বীকৃতি পেতে চলেছে জেনে খুব গর্ব হচ্ছে।’’ পাঠক আনন্দগোপাল সরকার, জগৎপ্রিয় চট্টোপাধ্যায়, তপতী ভট্টাচার্যেরা বলেন, ‘‘আমাদেরও গর্বের অন্ত নেই।’’ গ্রন্থাগারিক অনিতা মুখোপাধ্যায়, কর্মী নূপুর মুখোপাধ্যায়, পরিচালন সমিতির সভাপতি মানিকচাঁদ রায়, সম্পাদক সুব্রত ভট্টাচার্য জানান, মহকুমায় প্রথম হওয়ার পরে জেলায় সেরা হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। সেই প্রয়াস সফল হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন