চাইল্ড লাইনের হাতে ভূমি, শবর পড়ুয়াদের চোখে জল

মঙ্গলবার পুঞ্চায় শবর শিশুদের আবাসিক স্কুল চত্বরের গাছতলায় বছর কুড়ির এক যুবতী পুঁটুলিতে জড়ানো মাস দুয়েকের এক শিশু কন্যাকে ফেলে রেখে চলে যান। নজরে আসায় তাঁকে ডেকে আনেন স্কুলের পরিচালক অরূপ মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

সমীর দত্ত

পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০১:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

গাছতলায় পুঁটুলিতে ফেলে যাওয়া শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে আপন করে নিয়েছিল খুদে শবর পড়ুয়ারা। কিন্তু, চার দিনে যে এত মমতা জমে গিয়েছে, টের পেল শনিবার শিশুটিকে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা নিয়ে যাওয়ার সময় চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তেই। শিশু কন্যাটিকে নিয়ে গাড়ি চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত তারা ঠায় সেই দিকে তাকিয়ে থাকল।

Advertisement

চাইল্ড লাইনের পুরুলিয়া জেলা কো-অর্ডিনেটর অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারি, পুঞ্চায় একটি বেসরকারি আবাসিক স্কুলে একটি দু’মাস বয়সের শিশু কন্যা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ওই শিশুকন্যাকে পরিচর্যার জন্য পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে তাকে হোমে পাঠানো হবে।’’ তিনি জানান, শিশুর মা চাইলে ছ’মাসের মধ্যে নিজের অধিকার জানিয়ে আবেদন জানাতে পারবেন।

মঙ্গলবার পুঞ্চায় শবর শিশুদের আবাসিক স্কুল চত্বরের গাছতলায় বছর কুড়ির এক যুবতী পুঁটুলিতে জড়ানো মাস দুয়েকের এক শিশু কন্যাকে ফেলে রেখে চলে যান। নজরে আসায় তাঁকে ডেকে আনেন স্কুলের পরিচালক অরূপ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, ওই যুবতীর কাছে তিনি শুনেছেন, তিনি জনজাতি সম্প্রদায়ের। কিন্তু বাড়ির অমতে বিয়ে করেন অন্য সম্প্রদায়ের যুবককে। বরাবাজারের এক গ্রামে তাঁরা সংসার পাতেন। কিন্তু, অন্তঃসত্ত্বা হতেই স্বামী ছেড়ে চলে যান। পরে তাঁর সন্তান হয়। নিজের রোজগার না থাকায় মেয়েকে কী ভাবে বড় করবেন তা নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েন তিনি।

Advertisement

অরূপবাবু বলেন, ‘‘শিশুটির মা আমার কাছে দাবি করেন, স্বামী অন্য সম্প্রদায়ের হওয়ায় ওই সন্তানকে তাঁর বাপের বাড়ির লোকেরা ঘরে তুলতে চাননি। তাঁরা ওই যুবতীকে শর্ত দিয়েছেন, শিশুটিকে বাইরে ফেলে রেখে এলেই তিনি বাপের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। তাই স্কুলেই মেয়েটি ঠিক থাকবে ভেবে তিনি ফেলে রেখে যান।’’

সাঁওতালদের সর্বভারতীয় সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর তরফে জানানো হয়, মেয়েটি যদি দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে চান, তা হলে সঙ্গে সন্তান থাকলে অসুবিধা হতে পারে। তবে শিশুটি শবরদের স্কুলে থাকলে তাঁরা সংগঠনের তরফে আর্থিক সহায়তা করবেন।

এ দিন দুপুর ১২টায় চাইল্ড লাইনের দুই সদস্য তুষারকান্তি ত্রিপাঠি ও মনীষা নন্দী পুলিশ নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করতে স্কুলে যান। কিন্তু, শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত তাকে হাতছাড়া করবেন না বলে অনড় থাকেন অরূপবাবু। তিনি যুক্তি দেন, হোমে না রেখে আমাদের ভরসা করে শিশুকে রেখে গিয়েছেন তার মা। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলা জরুরি। তা ছাড়া, ওই যুবতীর পরিচয় গোপন রাখাও প্রয়োজন। চাইল্ড লাইনের কর্মীরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, এই বয়সের শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া রাখা ঠিক নয়। এখানে ঠিকমতো পরিচর্যাও সম্ভব নয়। এতে ওই শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে।

দু’পক্ষ নিজেদের যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তিতে অনড় থাকেন। চাইল্ড লাইন জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জেলাশাসকের নির্দেশে পুঞ্চার জয়েন্ট বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায় ওই স্কুলে যান। তিনি বলেন, ‘‘শিশু সুরক্ষার আইনগত নানা দিক অরূপবাবুকে বোঝাই। পরে মত বদলান।’’

শিশুটিকে কেউ ভূমি, কেউ বা ভাগ্যশ্রী বলে ডাকছিল। তাই কাছছাড়া হওয়ায় আবাসিক মৌমিতা শবর, পিঙ্কি শবররা বলে, ‘‘ও আমাদের খেলার সাথী হয়ে উঠেছিল। আর কোনও দিন ওর সঙ্গে আমাদের দেখা হবে কি না, আমরা জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন