Bishnupur

Bishnupur: ৭৫ বছরে কানগড়ে প্রথম উড়ল তেরঙ্গা, খুশি শিবুরা

আলপথ ধরে জল-কাদা পেরিয়ে পৌঁছনো যায় শাল জঙ্গলে ঘেরা কানগড়ে। ২৩ ঘর আদিবাসীর বাস।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২২ ০৭:৫৬
Share:

পতাকা তুললেন শিবু। নিজস্ব চিত্র

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কাছে তৈরি করা এয়ারস্ট্রিপের আশপাশ থেকে বারবার বসতি উৎখাতের চেষ্টা চালায় ব্রিটিশ সেনা। তাদের নজর এড়িয়ে কিছু আদিবাসী পরিবার জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু পাকাপাকি ভিটে ছাড়েননি স্থানীয় বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের কানগড় গ্রামের মুষ্ঠিমেয় বাসিন্দারা। গ্রাম-বাঁচানোর লড়াইয়ের ইতিহাস বাপ-ঠাকুরদার মুখে শুনলেও কখনও জাতীয় পতাকা তোলা হয়নি তাঁদের। সোমবার, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে সে গ্রামে প্রথম উড়ল জাতীয় পতাকা! পতাকা তুলে পূর্বপুরুষদের লড়াইয়ের স্মৃতিচারণ করলেন গ্রামের প্রবীণতম শিবু কিস্কু।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘‘পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছি ব্রিটিশ সেনা বারবার আমাদের ভি়টেছাড়া করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে কোনও দিন এখানে জাতীয় পতাকা তুলতে কেউ উদ্যোগী হননি। এ বারই প্রথম পতাকা তুলতে পেরে গর্বে বুক ভরে গেল।’’

আলপথ ধরে জল-কাদা পেরিয়ে পৌঁছনো যায় শাল জঙ্গলে ঘেরা কানগড়ে। ২৩ ঘর আদিবাসীর বাস। মূলত জঙ্গলের শালপাতা আর শুকনো কাঠ কুড়িয়ে বিক্রি করে তাঁদের দিন চলে। সোমবার ওই গ্রামে বিষ্ণুপুরের একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষাকেন্দ্র নিখরচার স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেছিল। তারা পতাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারে, ওই গ্রামে আগে কখনও জাতীয় পতাকা তোলা হয়নি।

Advertisement

ওই প্রতিষ্ঠানের রেজিস্টার কৌশিক পালের কথায়, ‘‘গ্রামে কোনও দিন পতাকা তোলা হয়নি জানতে পেরে গ্রামের প্রবীণতম বাসিন্দা শিবু কিস্কুকে জাতীয় পতাকা তুলতে অনুরোধ করি।’’ স্বাস্থ্য শিবিরের কর্মীরা জাতীয় সঙ্গীত করেন। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রামের বয়স্ক মাকু মান্ডি, পানমনি মুর্মু, সোহাগি মান্ডিরা।

শিবু জানান, এয়ারস্ট্রিপ ও পিয়ারডোবার সেনাছাউনির নিরাপত্তার কারণে কানগড়ের মতো ছোট্ট বসতিগুলো তুলে দিতে চাপ দিত ব্রিটিশ সেনা। তিনি বলেন, ‘‘বাবার কাছে শুনেছি, ব্রিটিশ সেনারা আমাদের বারবার গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেছিল। সবাই চলে গেলেও দু’-এক ঘর জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে গিয়েছিলেন।’’ এত দিন পতাকা তোলেননি কেন? শিবু জানান, গ্রামে স্কুল বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকলে হয়তো এতদিনে পতাকা তোলা হত। তা তো নেই।

বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান কৃষ্ণা সর্দার বলেন, ‘‘সাধারণত গ্রামবাসীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পতাকা তোলেন। ওই গ্রামে আগে পতাকা তোলা হয়নি জানতাম না। তবে এরপর থেকে খোঁজখবর রাখব।’’ বিষ্ণুপুরের বিডিও শতদল দত্ত বলেন, ‘‘এই ধরনের গ্রামের কথা জানা ছিল না। পরের বার থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে ওই গ্রামে জাতীয় পতাকা তোলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন