ওয়ার্ড ভেঙে-জুড়ে চেহারা কেমন, চর্চা

খসড়া পুনর্বিন্যাসে আপত্তি আজ, সিউড়িতে শুক্রবার সর্বদল বৈঠক

দুটি পুরসভা সূত্রে খবর, নতুন করে সংযোজিত এলাকা ধরে ওয়ার্ডগুলির চেহারা কেমন হয় তার খসড়া ও ম্যাপ তৈরি করে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

 নিজস্ব সংবাদদাতা 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:১৪
Share:

ফাইল চিত্র

বোলপুর ও সিউড়ি পুরসভায় দুটি করে ওয়ার্ড বাড়ছে। গত মাসেই সেটা স্পষ্ট হয়েছে। দুই পুরসভায় বেশ কিছুটা করে পঞ্চায়েত এলাকাও ঢুকছে। ওয়ার্ডগুলি ভেঙে, জুড়ে পুনর্বিন্যাসের পরে চূড়ান্ত ছবিটা কেমন দাঁড়ায়, সেটা নিয়েই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এরই মাঝে পুনর্বিন্যাস খসড়া পুরবিধি মেনে হয়নি, এই মর্মে বোলপুরের খসড়া পুনর্বিন্যাস নিয়ে আপত্তি তুলেছে বাম ও কংগ্রেস। অন্য দিকে, সিউড়ি নিয়ে আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস ও বিজেপি। আজ, শুক্রবার সব রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে সিউড়ি প্রশাসন ভবনে এই নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।

Advertisement

দুটি পুরসভা সূত্রে খবর, নতুন করে সংযোজিত এলাকা ধরে ওয়ার্ডগুলির চেহারা কেমন হয় তার খসড়া ও ম্যাপ তৈরি করে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। দুই পুর কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, প্রশাসনের তরফে সর্বদলীয় বৈঠকের পরে সেটা চূড়ান্ত রূপ পাবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শুভাশিস বেজ জানিয়েছেন ‘‘দুই পুরসভার পাঠানো পুনর্বিন্যাসের খসড়া সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সেটা নিয়ে

শুনানি হবে। তার পরে পুনর্বিন্যাস চূড়ান্ত করা হবে।’’

Advertisement

জেলার মোট ছ’টি পুরসভার পাঁচটিতে পুর নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী বছর। সেই তালিকায় রয়েছে রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, সিউড়ি বোলপুর ও দুবরাজপুর। দুবরাজপুর পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পুরনির্বাচন না হলেও পুনর্বিন্যাস শেষে ইতিমধ্যেই ওয়ার্ড ভিত্তিক আসন সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ওই পুরসভার জন্য। বাকি চার পুরসভার মধ্যে সাঁইথিয়া ও রামপুরহাট পুরসভার সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করার কথা ৩১ ডিসেম্বর। সিউড়ি ও বোলপুরে যেহেতু পুনর্বিন্যাসের কাজ চলছে সেটা শেষ হলেই সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে।

রামপুরহাটের এসডিও শ্বেতা আগরওয়াল জানান, রামপুরহাট পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডেও সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। যথা সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে তা জমা দেওয়া হবে। ওয়ার্ড সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে সাঁইথিয়ার ১৬টি ওয়ার্ডেরও।

তবে এই সংরক্ষণের আগে কলেবরে বেড়ে যাওয়া সিউড়ি ও বোলপুর পুরসভার ছবিটা কেমন দাঁড়ায় সেটাই সকলের কৌতূহলের মূলে। প্রশাসন সূত্রে খবর, দুটি পুর এলাকা লাগোয়া কোন কোন মৌজা পুরসভায় যুক্ত হবে, তা ঠিক হয়ে গিয়েছে আগেই। সিউড়ি পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ড বেড়ে হবে ২১টি। বোলপুরের ২০টি ওয়ার্ড বেড়ে হবে ২২টি। সিউড়ি পুরসভা সূত্রে খবর, সিউড়ি ও সাঁইথিয়া বিধানসভা এলাকার চারটি পঞ্চায়েতের কিছুটা করে অংশ জুড়ছে সিউড়ি শহরের সঙ্গে। সিউড়ি বিধানসভা এলাকার তিলপাড়া, কড়িধ্যা এবং মল্লিকপুর পঞ্চায়েত, সাঁইথিয়া বিধানসভা এলাকার কেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বেশ কিছুটা করে অংশ। সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুয়ায়ী, বর্তমানে চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাস করছেন এমন প্রায় ২৪ হাজার নাগরিক আগামী দিনে পুর এলাকার বাসিন্দা হচ্ছেন।

প্রশ্ন ছিল, কী ভাবে সেটা হবে। ওয়ার্ডগুলির নম্বর বদলে যাবে, নাকি ওয়ার্ডগুলিকে ভেঙেচুরে, সংযোজন-বিয়োজন করে নতুন রূপ দেওয়া হবে। সিউড়ি পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়ার্ডগুলির নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। ১,৯, ১৬, ১৮ ১৯ ওয়ার্ডগুলিকে কলবরে অনেকটা করে বাড়ানো হয়েছে। তিলপাড়া ও কেন্দুয়ার জন্য দুটি নতুন ওয়ার্ড তৈরি হচ্ছে। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘এটা করতে গিয়ে ইচ্ছে মতো খসড়া তৈরি করেছে পুরসভা। কোনও ওয়ার্ডে ৬ হাজার বাসিন্দা, তো কোনও ওয়ার্ডে ২ হাজার বাসিন্দা দাঁড়িয়েছে। সামঞ্জস্য ও পুরবিধি মেনে ওয়ার্ড বিন্যাস হয়নি।’’

এ দিকে, বোলপুর পুরসভার সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে সিয়ান মুলুক, রাইপুর সুপুর ও রূপপুর পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি মৌজা। কী ভাবে নতুন রূপের বোলপুর পুরসভা, তা দেখানো হয়েছে খসড়া পুনর্বিন্যাসে। বোলপুর পুরসভা সূত্রে খবর, এত দিন যে কুড়িটি ওয়ার্ড ছিল, সেটা কমিয়ে প্রথমে ১৮টি করা হয়েছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড মুছে সেই অংশে ১৪ ও ১৭ নম্বর ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মিলিয়ে একটা ওয়ার্ড করা হয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কিছুটা অংশ সংযুক্ত হচ্ছে। নতুন সংযোজিত এলাকার জন্য বাড়ছে ৪টি ওয়ার্ড।

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সমীর ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘বোলপুর পুরসভা পুনর্বিন্যাসের কোনও নিয়ম মানেনি। সংযোজিত এলাকার একটি বুথকে জাম্প করিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানা হয়নি ন্যাচারাল ওয়ার্ড বাউন্ডারি।’’ আগামী দিনে সংরক্ষণের আওতায় যাতে না পড়তে হয়, তাই ইচ্ছে করে তফসিলি জনজাতির সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সমীরবাবু। কী ভাবে ওয়ার্ড বিন্যাস করা হয়েছে, সে ব্যাপারে নিজস্ব যুক্তি রয়েছে দুই পুরসভার। আজ, শুনানির পরে কী দাঁড়ায় সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন