ফাইল চিত্র।
মুরারইয়ে তোলাবাজি নিয়ে ফের সরব হলেন অনুব্রত মণ্ডল। তোলাবাজি চালালে দলের নেতা-কর্মী কাউকে রেয়াত করবেন না বলে চার দিন আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। রবিবার সরাসরি তেমন কিছু না বললেও তোলাবাজি রুখতে পুলিশকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার কথা বলেন তিনি। তবে এ দিনের বক্তৃতায় তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি।
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি এ দিন বলেন, ‘‘একটা কথা বলি, ভালো ভেবে নেবেন, খারাপ ভাববেন না। মুরারই ২ ব্লকে দু’টি জায়গায় টাকা উঠছে। রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। টাকা তুলবেন না। খাতির করবে না পুলিশ। পুলিশকে বলবো খাতির করবেন না। প্রশাসনকে বলবো, অন্যায় করলে ছাড়বেন না। পাঁচ জন আপনার নিন্দা করবে। কিন্তু পঁচিশটা লোক আপনাকে ভালো বলবে।’’ পাশাপাশি অনুব্রতবাবু আশ্বাস দেন, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সব কাজ করা হবে। কোনও রাস্তা কাঁচা থাকবে না। তাঁর কথায়, ‘‘কাজ না করলে ভোট চাইব না। রাস্তা, পানীয় জল চাই। অশান্তি, হানাহানি চাই না।’’
বিজেপির দিকে এ দিন তোপ দাগেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি, তুমি যদি মনে করো হানাহানি করবে, আমি ছেড়ে কথা বলবো না। চোখ দেখাবেন না। চোখ রাঙাবেন না। ভয় পাই না।’’ রাজস্থানে মালদহের শ্রমিক খুনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনা আমার জেলায় হলে কাউকে রেয়াত করতাম না। মানুষকে পুড়িয়ে কেন মারবে? লজ্জা করে না!’’
উল্লেখ্য ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৭ সদস্যের মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম জিতেছিল ১০টি আসন, কংগ্রেস ৯টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ৪, তৃণমূল পেয়েছিল ৪টি আসন। ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একটিতেও তৃণমূল একক ভাবে ক্ষমতায় আসেনি। কংগ্রেসের সমর্থনে নন্দীগ্রাম এবং জাজিগ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান নির্বাচিত হয়েছিল। জেলা পরিষদের ৩টি আসনে দু’টিতে জেতে সিপিএম। একটি পেয়েছিল কংগ্রেস। পরে কংগ্রেস এবং সিপিএমের এক জন করে সদস্য তৃণমূলে যোগদান করেন।
পঞ্চায়েত সমিতিতেও কংগ্রেসের ৯ জন, সিপিএমের ৪ এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ৪ জন সদস্য তৃণমূলে যোগদান করেন। গ্রাম পঞ্চায়েতেও কংগ্রেস, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লকের কয়েক জন সদস্য তৃণমূলে সামিল হওয়ায় ওই দলের শক্তিবৃদ্ধি হয়। পরে বিধানসভা নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করে মুরারই বিধানসভা দখলে রাখে তৃণমূল। মুরারই বিধানসভার কংগ্রেস প্রার্থী আলি মোর্তাজা খান তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে দলীয় নেতৃত্বের দাবি। তবে ‘নব্য তৃণমূল’ এবং ‘পুরাতন তৃণমূলের’ দ্বন্দ্ব কলেজ থেকে পঞ্চায়েত স্তরে মাধেমধ্যেই লেগেই থাকে। দলের অন্দরমহলের খবর, নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি নিয়ে এখনও মুরারই ২ ব্লক তৃণমূলের অন্দরমহলে ক্ষোভ রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এ দিনের সভায় ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি আবু বাক্কারকে মঞ্চে দেখতে না পেয়ে দলীয় নেতা ত্রিদিব ভট্টাচার্যকে ‘মান-অভিমান’ মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন অনুব্রতবাবু। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের আর্জি মেনে মুরারই ২ ব্লকে একটি কলেজ গড়ে দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। মঞ্চে বসে থাকা জেলা পরিষদ সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে মুরারই ২ ব্লকে ১০টি সোলার সাবমার্সেবল পাম্প দেওয়ার নির্দেশও দেন। সভার পর তাঁর কাছে এলাকার বাসিন্দারা রেশনে খারাপ মানের চাল সরবরাহের অভিযোগ তোলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি বলে যান— যে সমস্ত ডিলার রেশনে খারাপ চাল দিচ্ছেন, তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে।