মাঠে নামুন বিধায়কেরাও: কেষ্ট

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে জেলার তিন মহকুমার দলীয় কর্মীদের নিয়ে বুথ সম্মেলন করছে তৃণমূল। বোলপুর এবং সিউড়ি মহকুমা সম্মেলন শেষ হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২৬
Share:

সম্মেলন: রামপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

‘এমএলএ-গিরি’ না করে মাঠে নেমে কাজ করার কথা বললেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। অনুব্রতর কথায়, ‘‘অঞ্চল সভাপতিরা খেটে কাজ করেন। খাটতে হবে আপনাদেরও।’’ কেন মহিলা কর্মী কম হল, সেই প্রশ্ন তুলে সোমবার রামপুরহাটের মহকুমাস্তরের বুথ সম্মেলনে ক্ষোভও উগরে দেন।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে জেলার তিন মহকুমার দলীয় কর্মীদের নিয়ে বুথ সম্মেলন করছে তৃণমূল। বোলপুর এবং সিউড়ি মহকুমা সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ দিন জেলার সবচেয়ে বড় মহকুমা, রামপুরহাটে বুথ-কর্মীদের সম্মেলন হয়। সেখানে অনুব্রত বলেন, ‘‘পাঁচটি বিধানসভা নিয়ে বুথ সম্মেলন। মোট বুথ ১২৯৩। কিন্তু, মহিলার সংখ্যা অনেক কম। ১৩০০ মহিলা তো নেই।’’ আরও বলেন, ‘‘ব্লক প্রেসিডেন্ট চেষ্টা করেনি। এমএলএরা গ্রাহ্য করেন না। তার জন্যই মহিলাদের সংখ্যা কম।” তবে বুথ কর্মীর উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন কেষ্ট। অনুব্রতর কথায়, ‘‘সাড়ে ছ’হাজার বুথ কর্মী থাকার কথা। সেটা মোটামুটি ঠিক আছে।’’ এরপরই কিছুটা থেমে বিধায়কদের নাম না করে যোগ করেন, ‘‘পাঞ্জাবি, পায়জামা পড়ে এমএলএ-গিরি করলে চলবে না।’’

এই সময় রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্যের নাম নেন অনুব্রত। ত্রিদিববাবুর নাম করে বলেন, ‘‘আপনাকেও খাটতে হবে। ঘাটতিটা কিন্তু হতো না। নজর দেওয়া হয়নি বলেই এমনটা হয়েছে।’’ যাঁরা কাজ করবেন না, তাঁদের সরে যেতে হবে— ফের এমন বার্তাও দেন। এ দিনও বুথ কর্মীদের প্রতি সম্মান দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি। অনুব্রতর কথায়, ‘‘উন্নয়ন নিয়ে কোনও দুর্নীতি করব না।’’

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, রামপুরহাটে এই সম্মেলনের গুরুত্ব যথেষ্ট। কেননা, গত পঞ্চায়েত ভোটে এই মহকুমাতেই সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেস এবং বিজেপি কিছুটা হলেও তৃণমূলকে বেগ দিয়েছিল। বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনে হার হয়েছিল শাসকদলের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রামপুরহাটের মুরারই ১ ও ২, নলহাটি ১ ও ২, রামপুরহাট ১ ও ২, ময়ূরেশ্বর ১ ও ২— মোট ৮টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে রামপুরহাট ১, ময়ূরেশ্বর ১ ও ২— এই তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল একক ভাবে দখল করে। নলহাটি ১ ও ২, মুরারই ২ বামফ্রন্ট দখল করে। পরে মুরারই ১ এবং রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচিত কংগ্রেস কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দেন। তাতে দুটি পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে যায়।

একই ভাবে মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতিতেও কংগ্রেস, সিপিএম ফরওয়ার্ড ব্লকের বেশ কিছু নির্বাচিত সদস্য তৃণমূলে যোগ দিলে মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূল দখল করে। অনাস্থা নিয়ে আইনি জটিলতায় হাতে আসেনি শুধু নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতি। আবার রামপুরহাটের ৮টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে জেলা পরিষদের মোট ১৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছিল। সিপিএম ৯টি এবং কংগ্রেস ও ফরোয়ার্ড ব্লক ২টি করে আসন পেয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে এবং লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস, সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে অনেকে তৃণমূলে যোগ দেন।

এই পরিস্থিতিতে জেলা তো বটেই, রামপুরহাটেও বিরোধীদের কোনঠাসা করতে নানা কর্মসূচি নিয়েছে শাসকদল। বুথ সম্মেলনের পরে শুরু হয়েছে মহকুমাস্তরের সম্মেলন। এ দিন অনুব্রত ছাড়া বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস, অশোক চট্টোপাধ্যায় সহ অন্য নেতৃত্ব। আশিসবাবু বিজেপি-র সমালোচনা করেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘গাঁধী পার্কের মাঠের এক দশমাংশ ভরানোরও ক্ষমতা ওদের নেই। ওদের নিয়ে বিচলিত হবেন না। আমরা বিচলিত নই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন