পথ বাঁধা হোক টোটোর, বাঁকুড়ায় আন্দোলনে রিকশাচালকেরা

ব্যাটারি চালিত তিন চাকার ই-রিকশার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শহরে। অলিগলি থেকে রাজপথ বাঁকুড়ার সর্বত্রই ছুটছে এই টোটো। রিকশার তুলনায় ভাড়া কম হওয়ায় যাত্রীরা স্বস্তি পেলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই টোটো চলছে বলে এ বার অভিযোগ তুলে কোমর বেঁধে পথে নামলেন রিকশা চালকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:৪৩
Share:

কার দখলে থাকবে পথ। সেই প্রশ্নে শহরের রাস্তা ঘিরলেন রিকশাচালকেরা। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ব্যাটারি চালিত তিন চাকার ই-রিকশার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শহরে। অলিগলি থেকে রাজপথ বাঁকুড়ার সর্বত্রই ছুটছে এই টোটো। রিকশার তুলনায় ভাড়া কম হওয়ায় যাত্রীরা স্বস্তি পেলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই টোটো চলছে বলে এ বার অভিযোগ তুলে কোমর বেঁধে পথে নামলেন রিকশা চালকেরা।

Advertisement

মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলার একাংশ রিকশা দিয়ে দখল করে টোটোর নির্দিষ্ট রুট করে দেওয়ার দাবি তুলল বাঁকুড়া শহর রিকশা চালক ইউনিয়ন। মোট সাত দফা দাবিতে জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। সংগঠনের সভাপতি সুজিত রায় অভিযোগ করেন, “কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই টোটো শহরময় ঘুরে বেরাচ্ছে। এতে আমাদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। অবৈধ এই কারবার রুখতে প্রশাসনেরও কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। তাই আমাদের পথে নামতে হল।’’ এ দিকে, সারি সারি রিকশা দিয়ে পথ ঘিরে রাখায় যাত্রীরা নাকাল হন।

ঘটনা হল, বাঁকুড়া শহরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বলতে ছিল রিকশা। তিনচাকার এই যানই যাত্রীদের একমাত্র সম্বল ছিল। কিন্তু রিকশা ভাড়ার উপরেও পুরসভার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে অনেক রিকশা চালকই যাত্রীদের কাছ থেকে খেয়ালখুশি মতো ভাড়াও নেয় বলে অভিযোগ তুলে আসছিলেন যাত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে শহরে টোটো বা ই-রিকশা চালু করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উঠছিল। এরই মধ্যে গত কয়েক বছরে গুটি গুটি করে টোটোর যাত্রী পরিষেবা চালু হয়।

Advertisement

এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছেন কমবেশি ১৭০টি। এমনটা জানাচ্ছে বাঁকুড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। তবে এই গাড়িগুলি পথে নামলেও বেশিরভাগই রেজিস্ট্রেশন-বিহীন। শহরের মধ্যে চলার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিও পায়নি টোটো। অথচ তারপরেও শহরের ভিতরে দাপিয়ে বেরাচ্ছে।

প্রশাসনেরই একটি সূত্রে জানানো হচ্ছে, বিষয়টি নজরে এলেও প্রথমে এড়িয়েই গিয়েছিল আরটিও দফতর। কিন্তু মেনে নিতে পারেননি রিকশা চালক থেকে ট্রেকার বা অটো চালকেরা। রাস্তাঘাটে টোটো ধরে আটকে দেওয়ার মতো ছোটখাটো ঘটনাও ঘটেছে। বাঁকুড়া স্টেশনে যাত্রী তোলাকে কেন্দ্র করে টোটো চালকদের সঙ্গে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। তাই টোটো চালকেরা নিজেদের সংগঠনও গড়ে ফেলেছেন।

ঝামেলা হচ্ছে দেখে সম্প্রতি জেলা আরটিও দফতরের তরফে টোটোগুলিকে শহরের বাইরে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের দিকে রুট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই রুটে যেতে রাজি নন টোটো চালকেরা। ‘বাঁকুড়া জেলা ই-রিকশা ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক কৌশিক গড়াই বলছেন, “গ্রামাঞ্চলের দিকে যাওয়ার যাত্রী নেই। শহরের মধ্যে যদি অটো, ট্রেকার, জিও গাড়ি চলতে পারে, তাহলে কেন ই-রিকশা (টোটো) চলতে পারবে না?” প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

বাঁকুড়ার আরটিও সৌমেন দাস জানাচ্ছেন, শহরে এই মুহুর্তে বৈধ ই-রিকশা রয়েছে কমবেশি ১০টি। বাকি গাড়িগুলি সবই অবৈধ। তাহলে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তিনি বলেন, “নির্বাচনী বিধি শেষ হলেই আমরা অবৈধ ই-রিকশা রুখতে পদক্ষেপ করব। যাঁরা এই ভাবে গাড়ি বিক্রি করছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, নিয়ম মাফিক শহরের মধ্যে ই-রিকশা চালানোর নিয়ম নেই। তাঁর কথায়, “নির্দেশিকায় বলা আছে প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে কোনও পরিবহণ ব্যবস্থাই নেই, সেখানেই ই-রিকশা চলতে পারে।”

সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরে টোটো ও রিকশাচালকদের সংঘাত হয়েছিল। অনুমতি ছাড়া টোটো চালকেরা পথে নামছে এই অভিযোগে রিকশাচালকেরা বার বার অবস্থান বিক্ষোভ করেন। দু’পক্ষের মারপিটও হয়। যদিও কোনও সমাধান মেলেনি।

বস্তুত, বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন জায়গাতেও পরিবহণ ব্যবস্থা ভাল নয়। কিছু এলাকায় যেতে গেলে মোটা টাকার ভাড়া মিটিয়ে রিকশায় যাওয়া ছাড়া অন্য গতি নেই।এই পরিস্থিতিতে শহরের মধ্যে ই-রিকশাকে ছাড়পত্র কী দেওয়া যেতে পারে? সৌমেনবাবু বলেন, “পুরোটাই নির্ভর করছে পুরসভার উপর। পুরকর্তৃপক্ষ যদি আমাদের নির্দিষ্ট করে ই-রিকশার রুট করতে বলেন, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’’

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “রিকশার উপর নির্ভর করে বহু মানুষ সংসার চালাচ্ছেন। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাই ভেবেই এগোতে হবে। এমন একটা রাস্তা বের করতে হবে যাতে শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাতেও গতি আসে ও পরিবহণ পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদেরও ক্ষতি না হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন