কালীঘাটের বৈঠকে তোপ মমতার

‘দল করছ না’! পদই গেল যুব সভাপতির

আশঙ্কা ছিলই। ঘটলও তাই। বুধবার কালীঘাটে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক ছিল। বাঁকুড়ার নেতাদের ধরে ধরে সেই বৈঠকে ডাকা দেখে দলের অন্দরে অনেকেই আগে থেকে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন, কিছু একটা ঘটতে চলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

ফাইল চিত্র।

আশঙ্কা ছিলই। ঘটলও তাই।

Advertisement

বুধবার কালীঘাটে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক ছিল। বাঁকুড়ার নেতাদের ধরে ধরে সেই বৈঠকে ডাকা দেখে দলের অন্দরে অনেকেই আগে থেকে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন, কিছু একটা ঘটতে চলেছে। এক রাশ দুশ্চিন্তা নিয়েই জেলার নেতারা পৌঁছে গিয়েছিলেন কালীঘাটে। সেই চিন্তা যে অমূলক নয়, তা টের পাওয়া গেল বৈঠকেই। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খেলেন বাঁকুড়ার একাধিক শীর্ষ নেতা। পদ গেল দলের জেলা যুব সভাপতির।

বাঁকুড়ায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে অনেক দিন ধরেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী। জেলা সফরে এসে কিংবা কালীঘাটে আগের একাধিক বৈঠকে দলের দ্বন্দ্বে রাশ টানার বার্তা বারবার দিয়েছেন তিনি। তবু জেলায় থামেনি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। এই নিয়ে মারামারিও লেগে আছে বিভিন্ন ব্লকে। নেত্রীর সেই রাগই এ দিন গিয়ে পড়ে বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-এর উপরে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে জেলা সভাপতিকে উদ্দেশ করে মমতা সরাসরি বলেন, ‘‘আপনার তো জেলা সভাপতি হওয়ার যোগ্যতাই নেই! এত দিনেও এলাকায় ব্লক কমিটি গড়তে পারলেন না।’’

Advertisement

সাত দিনের মধ্যে প্রতি ব্লকে কমিটি গড়ার নির্দেশ দেন দলনেত্রী। জানিয়ে দেন, ওই কমিটিতে সব শিবিরের লোকজন রাখতে হবে।

এর পরেই ডাক পড়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর। মমতা তাঁকে বলেন, ‘‘তুমি তো লায়েক হয়ে গিয়েছ। তোমায় রাখা হবে কেন?’’ অল্পের উপর দিয়ে সভাধিপতি এ যাত্রা রক্ষা পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-ও নেত্রীর তোপের মুখে পড়েন। মমতা তাঁকে বলেন, ‘‘দল তো করছ না! শুধুই নিজের স্বার্থ দেখছ।’’ বাঁকুড়ার যুব সভাপতি কে, তা এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান। শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে দাঁড়াতে তাঁকে বলেন, ‘‘নিজের আখের গোছানো ছাড়া আর কিছু করছ না!’’ এর পরেই শিবাজীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। দলের তরফে বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলার নতুন যুব সভাপতি বাছার।

বিধানসভা ভোটে উপচে পড়া সাফল্যের মধ্যে তৃণমূলের কাঁটা ছিল বাঁকুড়া। এই জেলার বেশ কয়েকটি আসনে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। পরে দলের অন্দরে এই হার নিয়ে কাঁটাছেড়া হয়েছে। তিনিও যে বিষয়টি নিয়ে বেশ বিরক্ত এ দিনের বৈঠকে নেত্রী তাই বুঝিয়ে দিলেন বলে উপস্থিত নেতৃত্ব মনে করছেন। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল দুই প্রাক্তন বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল ও আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে। ডাক পেয়েছিলেন তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীও।

বৈঠকে বাঁকুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেত্রী বলেন, ‘‘বাঁকুড়া নিয়ে করছটা কী?’’ কল্যাণ বলেন, ‘‘ওখানে এত ঝগড়া যে আমার দ্বারা হচ্ছে না।’’ অভিষেক এবং কল্যাণকে বাঁকুড়ার দিকে নজর দিতে বলেন মমতা।

শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘নেত্রী যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মাথা পেতে নেব। তবে আলোচনায় এই ধরনের কোনও কথাই হয়নি।’’ একই দাবি করেছেন সাংসদ সৌমিত্র। জেলা সভাপতির বক্তব্য, ‘‘বাঁকুড়া জেলাকে আলাদা ভাবে ব্লক কমিটি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। অন্য অনেক জেলাও ছিল। সামগ্রিক ভাবে সবাইকেই দ্রুত ব্লক কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন